অসিয়ত মানুষের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কথা। প্রিয় নবী (সা.) তার উম্মতকে বিশেষ কিছু অসিয়ত করেছেন। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ : রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সালাত দ্বীনের স্তম্ভ।’ আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর অন্তিম মুহূর্তে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং তার মুখের ভাষায় এ অসিয়ত ছিল, ‘সালাত, সালাত (অর্থাৎ নামাজ পড়বে)’। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২৬৬৮৪।)
কুরআন ও সুন্নাহ মতে জীবন গঠন : রাসূল (সা.) বিদায় হজে নামিরায় প্রদত্ত দীর্ঘ খুতবায় বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি, তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে, তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কী বলবে? তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, দায়িত্ব আদায় করেছেন এবং কল্যাণ কামনা করেছেন’। (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮।)
রাসূল (সা.)-এর এ অসিয়তটি কুরআনের অনেক আয়াতে বর্ণিত অসিয়তের মতোই। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয় না, অথচ তোমরা তা শুনছ’। (সূরা : আনফাল, আয়াত : ২০।)
নবী পরিবারের প্রতি সম্মান : রাসূল (সা.) বলেন, ‘মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান দেখাবে’। (বুখারি, হাদিস : ৩৭০১।)
নবী-রাসূলদের পরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পক্ষে পবিত্র কুরআনেও আয়াত নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী মুমিনদের কাছে নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীরা তাদের মায়ের মতো।’ (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৬।)
আনসারদের ভালোবাসা : ইমানের চিহ্ন হলো, আনসারদের ভালোবাসা এবং মুনাফিকির চিহ্ন হলো, আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭।)
আমিরের অনুসরণ : রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে মানবসকল! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় কর, তোমাদের ধন-সম্পদের জাকাত আদায় কর এবং তোমাদের আমিরের অনুসরণ কর, তবেই তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৬।)
মুসলিমের সম্মান রক্ষা : অন্য মুসলমানের সম্মান রক্ষা করা মুমিনের দায়িত্ব। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১০।)
নারীদের সম্মান প্রদর্শন : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে আরাফাতের ময়দানের ভাষণে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের গ্রহণ করেছ। তাদের লজ্জাস্থান তোমরা হালাল করেছ আল্লাহর কলেমা তথা অঙ্গীকারের মাধ্যমে’। (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮।)
এভাবে বহু হাদিসে রাসূল (সা.) মা, বোন ও কন্যাদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করার অসিয়ত করেছেন।
অধীনদের সঙ্গে সদাচারের নির্দেশনা : আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘অন্তিম মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং তার মুখের ভাষায় এই অসিয়ত ছিল যে ‘তোমরা নিজেদের দাস-দাসীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে (অর্থাৎ তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে)’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬৬০৫)।
আমানত রক্ষা : রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! কারও কাছে অন্যের আমানত থাকলে সে যেন তা আমানতদাতার কাছে দিয়ে দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২০৬৯৫।)
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ইমান নেই।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৯৪।)
শিরকমুক্ত থাকা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, যে রোগ থেকে রাসূল (সা.) আর সুস্থ হয়ে ওঠেননি সেই রোগাবস্থায় তিনি বলেছেন, ‘ইহুদিদের প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫২৯।)
বিদআতমুক্ত থাকা : একদিন ফজরের নামাজের পর রাসূল (সা.) আমাদের দিকে ফিরে এমন এক নসিহত করলেন যে, তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তোমাদের কর্তব্য হলো আমার সুন্নত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে (বিদআতে) লিপ্ত হওয়া থেকে। কেননা বিদআত হলো ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭।)
ফিতনা থেকে দূরে থাকা : রাসূল (সা.) সব সময় স্বীয় উম্মতদের ফিতনা থেকে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছেন এবং তিনি বিভিন্ন সময় উম্মতকে ফিতনার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে (হারজ অর্থ খুনখারাবি)।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৩৬)
সুদ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা : সুদ এমন একটি মারাত্মক পাপ, সুদি কারবারির বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তার রাসূল যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (সা.) সব ধরনের সুদ বাতিল ঘোষণা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আর জাহেলি যুগের সুদ প্রথা বাতিল ঘোষিত হলো। এ প্রসঙ্গে প্রথম আমি আমাদের প্রাপ্য সুদ, যা আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ বাতিল ঘোষণা করলাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮।)
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.