জামিন পেয়ে ধর্ষণ মামলার আসামির বিরুদ্ধে কিশোরী বাদিনীকে হত্যার হুমকি, স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি।

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসবাগুন্দ গ্রামের ধর্ষণ মামলার আসামি আলাউদ্দিন (৪৫) উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার বাদিনী, এক কিশোরী মাতাকে, হত্যা ও মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলাউদ্দিন ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত সাত মাস বয়সী কন্যা সন্তানের জৈবিক পিতা হওয়া সত্ত্বেও বাদিনীর লিখিত অভিযোগে তিনি সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চান বলে জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে কিশোরী মাতা জানিয়েছেন, আলাউদ্দিন ৯ মাস জেল খাটার পর জামিন পেয়ে তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। প্রাণনাশের ভয়ে তিনি শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত তার ৭ মাস বয়সী কন্যা ফারজানা এখনো পিতৃপরিচয় পায়নি এবং বাদিনী পাননি স্ত্রীর স্বীকৃতি। আলাউদ্দিন হত্যা করে চোরাই পথে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় তিনি আসামির জামিন বাতিল করে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করেছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বাদিনীর দরিদ্র পিতার মৃত্যুর পর তিনি ঢাকার মিরপুর মডেল থানাধীন এক আত্মীয়ের বাসায় কাজ নেন। আত্মীয়তার সুবাদে আলাউদ্দিনের সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আলাউদ্দিন তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মেলামেশার কু-প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দিন তাকে ছুরি ধরে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি ও নেশা জাতীয় ঔষধ খাইয়ে তিনি বাদিনীকে বারবার ধর্ষণ করেন। আলাউদ্দিন ঘটনা প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলার এবং আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৮ মে ধর্ষণের ফলে বাদিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তিনি বাধ্য হয়ে ঘটনা প্রকাশ করেন। এরপর আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন।
গৃহকর্তা ও পরিবারের পরামর্শে বাদিনী ৯ জুন, ২০২৪ তারিখে মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশে ভিকটিমের মেডিক্যাল চেকআপে ৪ মাসের গর্ভাবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শিশু ফারজানার জন্ম হয়।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে আলাউদ্দিন বিদেশে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হন এবং জেল হাজতে যান।
আদালতের নির্দেশে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি কার্যালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, আলাউদ্দিনই বাদিনীর গর্ভজাত সন্তান ফারজানার জৈবিক পিতা (২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, মেমো নং- ২৪-০৩৮১৪/১)।
জামিন পরবর্তী হুমকি ও বাদিনীর আতঙ্ক
৯ মাস জেল হাজতে থাকার পর আলাউদ্দিন সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। এরপরই তিনি বাদিনীর পথরোধ করে ‘রায়ের আগেই মামলা তুলে না নিলে তাকে ও তার বাচ্চাকে হত্যা করে বিদেশে চলে যাবেন’ বলে হুমকি দেন।
আসামির এই হুমকিতে দরিদ্র পরিবারের অসহায় কিশোরী মাতা এখন দিশেহারা। তিনি আশঙ্কা করছেন, আলাউদ্দিন যেকোনো সময় তাকে ও তার সন্তানকে হত্যা করে পালিয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে আলাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং তাকে কায়দা করে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি যাতে বিদেশ না যেতে পারেন, সেজন্য মামলা দিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More