সিকৃবিতে বানরের আক্রমণ বৃদ্ধি: শতাধিক ছাত্রী আহত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার:সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্রী হলগুলোতে বানরের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে শতাধিক ছাত্রী বানরের আক্রমণে আহত হয়েছেন। বিশেষ করে টিলা ও গাছপালা ঘেরা সামাদ রহমান হল এবং সুহাসিনী দাস হল এলাকায় বানরের দল খাবারের সন্ধানে নিয়মিত প্রবেশ করে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

বানরের আক্রমণের পেছনের কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি

বানররা হল এলাকায় খাদ্য খোঁজার জন্য আসছে, যা মূলত বনাঞ্চলের পরিবর্তিত পরিবেশ ও খাবারের অভাবের কারণে ঘটছে। সিকৃবির চারপাশে গাছপালা এবং টিলামাঠের কারণে বানরদের চলাচলের সুযোগ বেড়ে গেছে। বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে হলের চারপাশে নেট স্থাপন করেছে, আশপাশের গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা হয়েছে এবং বানর ধরার জন্য ট্র্যাপ বসানো হয়েছে। তবুও এই উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বুধবার (৮ অক্টোবর) সিকৃবি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সামিউল আহসান তালুকদার বন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ের বন ভবনের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সানাউল্লাহ পাটোয়ারী এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছে এবং বন বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সিকৃবি প্রশাসন ইতোমধ্যে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করেছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কাজ করছে।

বানর উপদ্রবের প্রভাব ও শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ব

এই বানরের আক্রমণ শুধু শিক্ষার্থীদের শারীরিক ক্ষতির কারণ নয়, বরং মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তারা হলের বাইরে নিজে চলাফেরায় দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবন ও একাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

এছাড়া, বানরের আক্রমণে গুরুতর শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি রেবিস রোগের ঝুঁকিও রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ভবিষ্যৎ করণীয় ও সচেতনতার আহ্বান

সিকৃবি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বানরের উপদ্রব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তিনি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ও সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়ে সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে এবং বানর নিয়ন্ত্রণে জন্য ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সিকৃবির বানর উপদ্রবের সমস্যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা দীর্ঘসময় চলতে পারে, যা শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই বন বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More