ভারত-যুক্তরাজ্যের নতুন বাণিজ্য চুক্তি: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার উন্মোচন
স্টাফ রিপোর্টার:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সাম্প্রতিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ব্যাপক পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের রাজভবনে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা একত্রে এই নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করেন, যা দুই দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাণিজ্য চুক্তির মূল উপকারিতা ও প্রভাব
এই চুক্তি ভারতের জন্য আমদানি ব্যয় হ্রাস করবে এবং যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশ থেকে দরিদ্রতম পণ্যের শুল্ক কমানোর মাধ্যমে বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। মোদি বলেছেন, “এই চুক্তি তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং শিল্প ও ভোক্তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।” অর্থাৎ, শুধু বাণিজ্য নয়, এই সহযোগিতা দুই দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে যা সাধারণ মানুষের জীবনে স্পষ্ট পরিবর্তন আনবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এই ধরনের চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তুলবে। এর ফলে, বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
দুই দেশের বর্তমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছয় লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। নতুন চুক্তির মাধ্যমে পোশাক, জুতা এবং হিমায়িত চিংড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর মুক্তির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের সুবিধার সৃষ্টি করবে।
আইএমএফের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। চলতি বছরেই এটি জাপানের স্থান দখল করে চতুর্থ স্থানে উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল পার্টনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের জন্য এটি তার প্রথম ভারত সফর। তিনি ১২৫ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে জুলাইতে লন্ডনে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির পর এই সফর করেন। তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐ চুক্তির বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করা এবং নতুন বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা।
স্টারমার বলেন, “ভারতের প্রবৃদ্ধির গল্প সত্যিই অনন্য। আমি যা দেখেছি তা প্রমাণ করে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই যাত্রায় ভারতের অংশীদার হতে চাই।” এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে যুক্তরাজ্য ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনায় এতে অংশ নিতে আগ্রহী।
বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে, এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষাক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। নয়টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে নতুন ক্যাম্পাস চালু করবে, যা দুই দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করবে। এই উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের মানবসম্পদের বিকাশে সহায়ক হবে।
এই নতুন বাণিজ্য চুক্তি ও সহযোগিতা শুধু দুই দেশের অর্থনীতিতে নয়, সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কম শুল্কের ফলে পণ্যের দাম কমে যাবে, যা ভোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। পাশাপাশি, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তরুণদের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য উৎসুক।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ ভবিষ্যতের প্রজন্মকে গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে প্রজ্বলিত করবে, যা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
ভারত ও যুক্তরাজ্যের এই নতুন বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক চুক্তি নয়, এটি দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন যুগের সূচনা। অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে এই সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করবে। এই সম্পর্ক থেকে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে।
**সূত্র:** রয়টার্স, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.