সেফ এক্সিট নয়, ভয়াবহ রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনই জরুরি: আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার:জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫ নিয়ে শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরামর্শ সভায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সময়ে সেফ এক্সিটের ব্যাপারে অনেক আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু উপদেষ্টা হিসেবে তার দাবি, তাদের সেফ এক্সিটের কোনো প্রয়োজন নেই। বরং, দেশের ভয়াবহ ও অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধে ভরা রাষ্ট্রকাঠামো থেকে জাতির সেফ এক্সিট হওয়াই জরুরি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “গত ৫৫ বছরে আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাটসহ অসংখ্য কুপ্রবৃত্তির সাক্ষী হয়েছি। এই ধরনের আত্মঘাতী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সেফ এক্সিট দরকার।”

তাঁর এই বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা নিয়ে গভীর চিন্তার ইঙ্গিত দেয়। ভয়াবহ দুঃশাসন এবং অনিয়মের মধ্য দিয়ে জাতি চলমান থাকায় এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবন ও দেশের উন্নয়নে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

সভায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমান সময়ে ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ সরে যাওয়ার ধারণাটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত। অনেকেই মনে করেন, সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক নেতারা বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিরাপদ সরে যাওয়ার সুযোগ পেলে পরিস্থিতি সাময়িক শান্ত হয়। কিন্তু ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, তিনি বলেন, প্রকৃত সমস্যা হলো রাষ্ট্র কাঠামোর দুর্বলতা এবং এর ভয়াবহ অবস্থা। তাই ব্যক্তিগত সেফ এক্সিটের চেয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থায়ী সংস্কার বেশি জরুরি।

এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, দেশের উন্নয়ন ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম ও অরাজকতা থেকে মুক্ত করতে হবে। না হলে, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, দেশের যে কোনো সংকটের সমাধান ব্যক্তিগত নিরাপত্তার আশ্রয়ে নয়, বরং রাষ্ট্রব্যবস্থার গভীর সংস্কার ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্ভব। নাগরিক হিসেবে আমাদের সচেতন হওয়া এবং সুস্থ রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য অবিচলিত ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।

সূত্র:দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ, ১১ অক্টোবর ২০২৫

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More