সমাজে যেখানে ছন্দ পতন সেখানে ছড়াবো প্রানের মাতন” ৩৯তম অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে নজরুলের জীবনদর্শন ও বিদ্রোহের জয়গান

স্টাফ রিপোর্টার: “সমাজে যেখানে ছন্দ পতন সেখানে ছড়াবো প্রানের মাতন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এদিনের আয়োজনে মূল প্রতিপাদ্য ছিল “কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার আয়ুষ্কাল: প্রেক্ষিত নজরুলের বিদ্রোহী”। অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল আলোচনা সভা, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য পরিবেশন এবং নাটক মঞ্চায়ন।
সোমবার ২৭ অক্টোবর, সন্ধ্যা ৬টা থেকে চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে এই আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের অভিমত
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ মুস্নি আবু সাইফ। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন দর্শন নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। ডঃ সাইফ বলেন, “কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বৈষম্যহীন একজন মানুষ। তিনি সমাজে একতা বন্ধনের মাধ্যমে শান্তি এনেছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েও মানুষের পাশে ছিলেন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, নজরুলের কবিতা, গান ও ইসলামী সংগীত মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছে এবং তিনি সমাজে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ কোনো ধর্মকে ভেদাভেদ করতেন না।
বিশেষ অতিথি দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন নজরুল ইসলামের জীবন দর্শন ও পথচলা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের সকল ভেদাভেদ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন।” তিনি অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনকে শুভকামনা জানান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মনিরুজ্জামান। তিনি নজরুলকে একজন বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “তিনি ইতিহাসের পাতায় পাতায় থেকে যাবেন জীবন্ত। তিনি সবসময় প্রতিবাদী ছিলেন, অন্যায় দেখলে ছাড় দিতেন না। তাঁর কবিতা, সাহিত্য, গান মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে। ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণের পর অভাবের সংসারে শিক্ষা অর্জন করতে না পারলেও সেখান থেকে তাঁর লড়াই শুরু। তিনি লড়াই করে মানুষকে মুক্ত করেছেন।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান জোয়ার্দার বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী ও মানবিক মানুষ। তিনি মানুষের সঙ্গে কাজ করতেন এবং মানুষের নিপীড়ন দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।”
আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন অরিন্দম চুয়াডাঙ্গা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার এবং কণ্ঠশিল্পী হারুন উর রশীদ শান্ত, সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি নজীর আহম্মেদ, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি সামসুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল, সদস্য আব্দুল মালেক, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রমুখ।

আলোচনা সভার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্যনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সবশেষে মঞ্চস্থ হয় নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত নাটক ‘নীলকুঠি’, যা পরিবেশন করে নজরুল স্মৃতি সংসদ কার্পাসডাঙ্গা।
অনুষ্ঠানটিতে চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতিমনা মানুষজন অত্যন্ত মনোযোগ ও উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। আগামী মঙ্গলবার সুকান্ত দিবসের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More