অঞ্চলিক শ্রম অধিপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক আশার আলো দেখছে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারিরা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে ভোট
দর্শনা অফিস: সকল জল্পনা-কল্পনা, দৌড়-ঝাপ, আইনি লড়াই, পক্ষে বিপক্ষে কাদা ছোড়াছুড়ির কি অবসান ঘটলো ? ভোট স্থগিতের দীর্ঘ সাড়ে ৮ মাস পর ফের আশার আলো দেখতে পেলো কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের ভোটাররা। কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফের বৈঠক করেছেন কেরুজ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে। বৈঠকের সকলের সম্মতিক্রমে ভোটের পথেই হাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তারা। চলতি সপ্তাহে পূনরায় নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও আগামি ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষনা করা হতে পারে। ভোট হতে পারে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। খুলে দেয়া হলো ইউনিয়নের তালা। একের পর এক আইনি জটিলতা কাটিয়ে তোলা হলেও ফের নতুন নতুন আইনি র্যারাজালে থমকে গেছে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচনী কার্যক্রম। এক পক্ষ প্রকাশ্যেই ভোটের জন্য লড়লেও পক্ষান্তরে অন্য পক্ষ তিমিরে থেকেই মারছিলো গিট। বারবার গিট ছুটিয়ে নির্বাচনের মুখোমুখি পৌছেও হোচট খেতে হয়েছে কয়েকবার। স্মরণকালের কলংখিত অধ্যায় রচিত কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের চলতি বছরের নির্বাচন অনেকটাই মুখরোচক গল্পে পরিণত হয় সাধারণ মানুষগুলোর কাছে। তথ্যানুযায়ি তখনকার নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার ১২ আগষ্ট আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক বরাবর প্রেরিত পত্রে জানান, কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটি দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের জন্য কার্যক্রম তত্ববধানের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণের অনুরোধ করেন। ১৪ আগষ্ট শ্রম অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তৌফিক হোসেন পত্র প্রেরণ করেন সদর দপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সে পত্রে বলা কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের পদ শূন্য থাকায় কেরুজ ভোটের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন। উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম যোগদানের পর কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাচনী পরিচালনা পর্ষদের সাথে বৈঠক করেন। ৬ অক্টোবর খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত পত্র সুত্রেই কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ, মেয়াদ উত্তির্ণ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক সহ শ্রমিক নেতাদের নিয়ে ৯ অক্টোবর বেলা ১১ টার দিকে বৈঠক করা হবে। যথা সময়ে কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠক হয়। কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম, সহকারি পরিচালক তৈফিক হোসেন, শ্রমিক কর্মকর্তা আবুল হোসেন ও কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হোসেন তিন দফায় বৈঠক করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেয়াদ উর্ত্তিণ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সাথে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ওই বৈঠকে নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনার ফলে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়ায় ফিরে যান শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল। ৭ অক্টোবর শ্রম অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক শামীমা সুলতানা বারী স্বাক্ষরিত পত্রে জানান, ৭৫৭৬ নং রীট পিটিশনে মহামান্য হাই কোটের বিচারক মোঃ আকরাম হোসেন চৌধরী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ ৪ জুনের আদেশ মোতাবেক নির্বাচন সম্পন্ন করণের নির্দেশ দেন। ১৩ জুলাই ৫১৭/২০২৫ ইং পিটিসন নাম্বারে মহামান্য সুপ্রিম কোট ওই আদেশ বলবদ রাখেন। ১২ আগষ্টে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তারের প্রেরিত পত্র, ১৪ আগষ্টে ও ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের পত্রের মর্মানুয়ায়ি কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের নির্বাচন করণে পরবর্তি আইনুয়োগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ নির্দেশক্রমে করা হয়। ৯ অক্টোবরের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক শেষে ১২ অক্টোবরে খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত পত্রে জানান, ঢাকা শ্রম অধিদপ্তরের নির্দেশনা, মহামান্য হাইকোট বিভাগের দায়েরকৃত ৭৫৭৬ নং রীট পিটিশনের আদেশ, ওই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দায়েরকৃত ৫১৭ নং ১৩ জুলাইয়ের পিটিশনের আদেশ মোতাবেক কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের স্থগিতকৃত দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ি বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (অদ্যবদি সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধি মালা ২০১৫ (অদ্যবদি সংশোধিত) মোতাবেক নির্বাচন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে ওই দপ্তরকে অবহিত করণের নির্দেশ দেন। ২৫ জানুয়ারি সাধারণসভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। ৫ ফেব্রুয়ারি মিলের জনৈক শ্রমিককে অন্য মিলে বদলি জনিত কারণে অনাকাংখিত বিশৃংখলার কারণে সকল প্রার্থীদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ভোট স্থগিত করা হয়। পরে সকল প্রার্থীর দাবীতেই গত ৬ মার্চ ২ দফয়া ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ি ১৪ মার্চ ছিলো নির্বাচনের দিনক্ষন। সকল প্রস্তুতি যখন প্রায় শেষের দিকে ঠিক তার তিনদিন আগে ১১ মার্চ নির্বাচন সাময়িক স্থগিত ঘোষনা করেন কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান ও নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার। আইনি জটিলতা, তফসিল ঘোষনায় অনিয়মের অভিযোগ সহ আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের আপত্তির মুখেই ওই নির্বাচন সাময়িক স্থগিত করেন কর্মকর্তারা। ১১ মার্চ চিনিকলের হিসাব বিভাগের (কানামানা) করনীক রাসেদুল হক রাসেল নির্বাচনী তফসিল চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। এ দিকে অনিয়মতান্ত্রিক তফসিল ঘোষনার অভিযোগ তুলে দামুড়হুদা সহকারি জজ আদালতে রিট করেন একই বিভাগের করনীক (কানামানা) চৌধুরী রাসেল আহমেদ। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কর্তৃক ১১ মার্চে নির্বাচন স্থগিত রাখার বিরুদ্ধে ৫ মে ঢাকা হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স। ১৮ জুন এ রিটের রায় ঘোষনা করেন হাই কোর্টের বিচারক মোঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ। গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ও কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানকে প্রেরণকৃত হাই কোর্টের রায়ের কপি ডাক যোগে পৌছায় ২৬ জুন। রায়ে বিবাদীগণকে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচন ২০২৫ যথাযথ আইন ও নির্দেশনা মেনে কার্যক্রমের নির্দেশ দেন। সে দফাতেও হয়নি ভোট। এ দিকে চৌধুরী রাসেল আহমেদের দায়েরকৃত রিট আবেদন ১০ জুলাই খারিজ (নাকচ) করেন দামুড়হুদা সহকারি জজ আদালতের বিচারক। চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাঃ মারুফ সরোয়ার বাবু পক্ষে লিখিতভাবে আইনি মতামত দিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তারকে। এ দিকে আব্দুছ ছাত্তার সহ কমিটি প্রত্যেকেই গত কয়েকদিন আগেই করেছেন পদত্যাগ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ি ১৪ মার্চের নির্বাচন ১১ মার্চ স্থগিত করার কয়েকদিনের মাথায় ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফলে শ্রমিক-কর্মচারিরা হয়ে পড়েন অভিভাবকহীন। শ্রমিকসেবা পড়ে মুখ থুবড়ে। নেতৃত্ব শূন্য শ্রমিক ইউনিয়নের ঝুলতে থাকে তালা। আবারো ভোটের পক্ষে বিপক্ষে গোপনে বা প্রকাশ্যেই দৌড়িয়েছেন নেতৃবৃন্দ। ১ মাস ২ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে কুষ্টিয়া শ্রম অধিদপ্তরের ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে। এ বৈঠকের বিষয়ে পত্রের মাধ্যমে সোমবার অবহিত করা হয়। সে মোতাবেক কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম, সহকারি পরিচালক তৈফিক হোসেন ও শ্রমিক কর্মকর্তা আবুল হোসেন বৈঠক করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে। শুরুতেই ভোটের পক্ষে ৪৮ জন স্বাক্ষর করেন। অবশেষে খোরশেদ আলম সিদ্ধান্ত শোনান। সিদ্ধান্ত মোতাবেক শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আবারো নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘটন করা হবে। সে কমিটি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে। ইউনিয়নের তালা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নের উত্তির্ণ কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ সকল নেতৃবৃন্দ বসে আলোচনা করার সুযোগ থাকবে। আগামী ১৮ নভেম্ববরের মধ্যে ৩য় দফার তফসিল ঘোষনা হতে পারে। নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ ধরণের সিদ্ধান্তে শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে দেখা দেয় উল্লাস। ভোটের বাতাশ বইতেও শুরু করে কেরুজ এলাকায়। বৈঠকে শ্রমিক-কর্মচারি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মেয়াদ উত্তির্ণ কমিটির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, খবির উদ্দিন, আবু সাঈদ, মফিজুর রহমান, এসএম কবীর, বাবুল আক্তার, আরিফুল ইসলাম আরুক, সাইফুল ইসলাম মুকুল, সেলিম খান, ইদ্রিস আলী, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.