জীবননগর ব্যুরোঃ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তে নিহত বাংলাদেশী যুবক শহিদুল ইসলামের লাশ গত ৪ দিনেও ফেরত পাইনি স্বজনরা। লাশ ফেরত না পেয়ে শহিদুল ইসলামের স্বজনদের মহাদুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। স্বজনদের খাওয়া-দাওয়া, চোখে ঘুম নেই বললেই চলে। তাঁরা সীমান্তের দিকে তাকিয়ে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নিহত শহিদুল ইসলামের লাশ কখন বাড়িতে আসবে। কখন তারা শেষ বারের মতো এক নজর শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ দেখতে পাবেন। মঙ্গলবার দুপুরে নিহত শহিদুল ইসলামের বাড়িতে দিয়ে দেখা যায়, শহিদুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। তবে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলামের লাশ দেশে ফেরত আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বিএসএফের পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলামের লাশ কখন, কোন সময় ফেরত দেওয়া হবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ জীবননগর উপজেলার মাধপখালী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দু’সন্তানের জনক শহিদুল ইসলাম (৩৭) নামে এক বাংলাদেশি মাদককারবারী নিহত হন গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৪ টার সময়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে একদল মাদককারবারী ভারতের অভ্যন্তরে মাদক আনতে যাওয়ার সময় এ গুলির ঘটনা ঘটে। শহিদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় বিএসএফের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার নস্কর আলীর ছেলে।
শহিদুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন আক্তার জানান, শনিবার বিকেলে মাধবখালী সীমান্তের দোয়ালের মাঠে শহিদুল ইসলাম গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়েছিলো। এসময় বিএসএফ সদস্যরা শহিদুল ইসলামকে ধরে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এতে শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে নিহত হন বলে ভারতে তার পরিচিতজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বিএসএফের ৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট সুজিত কুমারের বরাত দিয়ে বিজিবির মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রফিকুল আলম পিএসসি জানান,
প্রথমে বিএসএফের পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলাম আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দিন রাত ৮ টার সময় বিএসএফের পক্ষ থেকে বিজিবিকে জানানো হয় শহিদুল ইসলাম নিহত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার নস্কর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামসহ ৬-৭ জন শনিবার বিকেলে ভারতে মাদক আনতে যায়। তারা মাধবখালী সীমান্তের ৭০ নম্বর মেইন পিলার হতে ২০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে পৌছালে ভারতের মাটিয়ারী ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। শহিদুল ইসলাম এসময় তার হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে বিএসএফের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বিএসএফের ছোড়া গুলিতে শহিদুল ইসলাম আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ওই রাতে কৃষ্ণগঞ্জ থানা হেফাজতে রাখা হয়। পরের দিন রোববার দুপুরে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হয় এবং ওই হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রেখে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.