আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৭ লক্ষাধিক টাকার গরমিল 

 

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মডেল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির প্রতিবেদনে আবারো ২৭ লক্ষাধিক টাকার গরমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের অর্থ লিপ্সার কারণে নিজের স্ত্রীর নামের জমি, গহনা বিক্রি করে ক্যাশবুক অনুযায়ী ক্যাশ মিলাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপসহ নানা অনিয়েমর বিষয়ে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল খুলনা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সকলের সামনে আসে। বিষয়টি অধিকতর দতন্তের জন্য উপ-পরিচালক জেলা অফিসারকে নির্দেশ দেন। এরপর জেলা শিক্ষা অফিস ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুরের নির্দেশে গঠিত অর্থ কমিটির প্রতিবেদন ও অফিস সহকারী সিরাজুল ইসলামের লিখিত অভিযোগে নতুন করে আরো ২৭ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। ৩ সদস্য বিশিষ্ট অর্থ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক (গণিত) জয়নাল আবেদীন, সদস্য সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) ইসাহক আলী ও ভোকেশনাল শিক্ষক আবু তালেব। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গঠিত বিদ্যালয়ের এ অর্থ কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল খুলনা বরাবর প্রেরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে আপনাকে অবগত করা যাচ্ছে যে, আপনি বিগত ১৪/০৮/২০২২ খ্রি: তারিখে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরেজমিন তদন্তে এসেছিলেন। পরিদর্শনকালে বিদ্যালয়ের অর্থ কমিটিকে ২০১৮-২০২২ খ্রি: পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় যাচাই বাছাই পূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ শুরু করি এবং আয়-ব্যয় যাচাই বাছাইকালে বিভিন্ন রকম অসামাঞ্জস্যতা খুঁঁজে পাই। যেমন: ক্যাশবুকে আয়-ব্যয় লেখার ক্ষেত্রে বিরাট অনিয়ম/কারচুপি খুঁজে পাই। আয়ের হিসাবের সর্বমোট টাকা যোগের অঙ্ক কম দেখানো হয়েছে। যেমন: ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের আয় (সরকারি অংশসহ) ১৫,৮৫,১৩১/-(পনের লক্ষ পঁচাশি হাজার একশত একত্রিশ) টাকা কিন্তু সর্বমোট যোগে দেখানো হয়েছে ১৩,৬১,০১১/-(তের লক্ষ একষট্টি হাজার এগার) টাকা অর্থাৎ ২,২৪,১২০/-(দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার একশত বিশ) টাকা কম দেখানো হয়েছে। এভাবে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত আয়ের সর্বমোট যোগের স্থলে সর্বমোট ১০,০২,৭৩৩/-(দশ লক্ষ দুই হাজার সাতশত তেত্রিশ) টাকা কম দেখানো হয়েছে। এছাড়া আয়কৃত অর্থ নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাংকে জমা না দিয়ে তা নিজের কাছে রেখে ইচ্ছামাফিক ভুয়া ভাউচার বানিয়ে খরচ করেছেন। এক মাসের আয় অন্য মাসে অর্থাৎ ৬-৭ মাস পরে জমা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দমত শিক্ষকের স্বাক্ষর করিয়ে অথবা নিজে একা স্বাক্ষর করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়, সেই তালিকা অর্থ কমিটি সংযুক্ত করে প্রতিবেদনের সাথে। এদিকে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর লিখিত বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানের অর্থ তছরুপ ও আত্মসাতের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অফিস সহকারী লিখিতভাবে বলেন, আমি মো. সিরাজুল ইসলাম, অফিস সহকারী, আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা। আমি অফিস সহকারী হিসেবে বিদ্যালয়ের অর্থ প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক গ্রহণ ও ব্যাংকে জমা দেয়ার কাজ করি। কিন্তু অতীব দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে, প্রায়ই প্রতিদিনের আয়কৃত অর্থ প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিদিন ব্যাংকে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট রাখতাম। অর্থ বছর শেষে যখন হিসাব মিলাতে যাই তখন গরমিল দেখতে পাই। তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন আমি প্রধান শিক্ষক ওগুলো ব্যবস্থা নিব আপনি ক্যাশবুকে যোগের অঙ্ক কম দেখান। আমি তার নির্দেশ মোতাবেক তাই করি। তিনি (প্রধান শিক্ষক) ক্যাশবুকে স্বাক্ষর করার সময় ওগুলো দেখে আবারও বলেন আমি প্রধান শিক্ষক আছি না। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। এভাবে তিনি বিদ্যালয়ের জানুয়ারি ২০১৮ খ্রি. থেকে জুন ২০২২ খ্রি. পর্যন্ত ১০,০২,৭৩৩/- (দশ লক্ষ দুই হাজার সাতশত তেত্রিশ) টাকা আয় কম দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। যা বিদ্যালয়ের ক্যাশবুকে প্রমাণ আছে। এছাড়া অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যখন তখন অনেকগুলো ভাউচার অর্থ কমিটির স্বাক্ষর ছাড়াই আমাকে দিয়ে টাকা নিতেন। না দিলে হুমকি ধামকি দিতেন। ক্যাশবুকে ঘষামাজা করে একই ঘরে আর একটা ব্যয় নিজে হাতে লিখতেন, অথবা আমাকে দিয়ে লেখাতেন। এছাড়া শিক্ষকদের অভিযোগে আরো জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রবিউল খান বিদ্যালয়ে যোগদানের বছর খানেক পর থেকেই বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করতে শুরু করেন। তার এ অপকর্মে কোন শিক্ষক বাধা দিতে গেলে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি, শোকজ ও সাসপেন্ড করা হতো। এছাড়া আলমডাঙ্গা বহুমুখী পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে কাপড়পট্টিতে যে দোকান ঘরগুলো আছে বর্তমান তা নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এসব দোকানের পাশের দোকানের মাসিক ভাড়া ৫ হাজার থেকে ৮হাজার টাকা। অথচ স্কুলের দোকানগুলোর ভাড়া ৭৫০/- টাকা থেকে ১২০০/- টাকার মধ্যে। অভিযোগ আছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান এসব দোকান থেকে নিয়মিত মাসিক হিস্যা গ্রহণ করেন। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আমার অজান্তে কিছু টাকার গরমিল হয়েছিল সেগুলো আমি বিদ্যালয়ের নিকট ফেরত দিয়েছি।

Comments (0)
Add Comment