ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু : সাজিদের ফোনকল ঘিরে রহস্য

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার ফোনকল ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। সর্বশেষ ক্যাম্পাসে তাকে দেখা যাওয়ার পর থেকে পুকুরে লাশ ভেসে ওঠার মধ্যে প্রায় ২৬ ঘণ্টায় সাজিদের ফোনে মোট পাঁচবার কল রিসিভ হয়। তার ফোনে এসব কল তারই তিনজন সহপাঠী ইমরান জাহান, নুসরাত ঐশী ও ইনসানুল ইমাম করেছিলেন বলে দাবি তাদের। তবে কল রিসিভ হলেও অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে দাবি কলদাতাদের। এ ঘটনা আলোচনায় আসলে ক্যাম্পাসে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ইনসান তার ফোন হ্যাক হয়েছে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার দাবি, সাজিদের সঙ্গে তার কল হিস্ট্রি এবং গ্যালারি থেকে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনশট ডিলিট হয়ে গেছে। তার এই ফেসবুক পোস্ট ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সাজিদকে সর্বশেষ বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ফুটবল মাঠে খেলতে দেখা যায়। ৪ টার পরে তারা খেলা শেষ করেছিলো বলে জানিয়েছেন অন্য খেলোয়াড়রা। এরপর জিয়া মোড়ে ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম তাকে দেখেন। এরপর থেকে তাকে আর কেউ দেখেননি। এ সময় তাকে যে পোশাক পরা অবস্থায় খেলতে দেখা যায় পরদিন বৃহস্পতিবার ওই একই পোশাকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আগেরদিন ক্যাম্পাসে সর্বশেষ তাকে ঘুরতে দেখার সময় থেকে তার লাশ ভেসে ওঠা পর্যন্ত মাঝের ২৬ ঘণ্টায় তার মোবাইল ফোনে পাঁচবার কল রিসিভ হয় বলে জানা গেছে। বুধবার রাত ৮ টা ৪৮ মিনিটে তার নাম্বারে কল দেন তার বন্ধু আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইমরান জাহান। ১৪ সেকেন্ডের মতো কল রিসিভ হলেও অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে জানান তিনি। আবারও কল দিলে একই ঘটনা ঘটে। ইমরান বলেন, আমি ভেবেছিলাম হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে কথা শোনা যায়নি। এজন্য আর খোঁজ নেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে লাশ ভেসে ওঠার খবর জানাজানি হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে তার বান্ধবী চারুকলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী নুসরাত ঐশী বিকাল ৫ টা ৩ মিনিটে সাজিদের নাম্বারে কল দিলে ১৩ সেকেন্ডের জন্য কল রিসিভ হয়। এর আধা ঘণ্টা পরেই পুকুরে লাশ ভেসে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম কলের এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর এবং সাজিদের লাশ সনাক্ত হওয়ার পর সন্ধ্যা ৬ টা ৪৮ মিনিটে সাজিদের নাম্বারে ঐশী আবারও কল দিলে তা ১০ সেকেন্ডের জন্য রিসিভ হয়। উভয় কলেই অপর পাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে জানান ঐশী। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে সাজিদকে মেসেজ করলে কোনো রিপ্লাই না আসায় বিকেলে কল দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার দিকে ইনসান সাজিদকে কল দিলেও রিসিভ হয়নি। পরে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে ইনসান সাজিদের নাম্বারে কল দিলে ২৫ সেকেন্ডের জন্য রিসিভ হয়। কিন্তু অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে জানান ইনসান। এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার পর পুকুরে সাজিদের লাশ ভেসে ওঠে। ৬ টা ৪০ মিনিটে লাশ পাড়ে আনলে শিক্ষার্থীরা এটা সাজিদের লাশ বলে শনাক্ত করে। ৬ টা ৪১ মিনিটে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী সাজিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইনসানকে সাজিদের খোঁজ নিতে বলেন। তখন ইনসান সাজিদের রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলেও দরজা খোলেনি বলে দাবি ইনসানের। ইনসান বলেন, সাজিদের নাম্বারে কল দিলে ২৫ সেকেন্ডের জন্য রিসিভ হওয়া কলের রেকর্ড আমার কাছে থাকলেও কললিস্ট থেকে কল হিস্ট্রি ডিলিট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে সাজিদের নাম্বারে কলের ডিটেইলসের স্ক্রিনশটও ফোনের গ্যালারি থেকে হারিয়ে গেছে। আমার মনে হয়, আমার ফোন হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, মারা যাওয়ার আগে সাজিদের যাদের সঙ্গে কথা হতো সে বিষয়ে আমরা সব তথ্য পেয়েছি। সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।