ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে মৎস্য বীজ উৎপাদন ও খামার ব্যবস্থাপক মো. আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া সরকারি গাছ কেটে তা বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি এই কর্মকর্তা। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে মৎস্য বীজ উৎপাদন ও খামার ব্যবস্থাপক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, আমান উল্লাহ চার বছর আগে যোগদানের পর থেকেই ঝিনাইদহের এই খামারে মাছের পোনা ক্রয়ের সরকারি বরাদ্দ আত্মসাত করছেন। মাছের পোনা না ছেড়ে পুরো বরাদ্দ পকেটস্থ করছেন তিনি। ঝিনাইদহ সদর খামারের ভেতরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ ছয়টি গাছ বিনা নোটিশে কেটেছেন। গাছ বিক্রির প্রায় ছয় লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে এমন আরও অর্থ আত্মসাত করেছেন। এমনকি খামারের মাছের জন্য তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকার খাবার বাকিতে কিনে সেই টাকা পরিশোধে টালবাহানা করছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি মাছের হ্যাচারি মেরামতের সরকারি বরাদ্দের টাকা প্রয়োজনীয় কাজ না করে কোনোরকম ঘষামাঝা করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেছেন আমান উল্লাহ। দুর্নীতির টাকায় কুষ্টিয়ায় শহরের কলেজ রোডে একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। উল্লেখিত এসব অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও জহুরুল ইসলাম।
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক জানান, ঝিনাইদহ সদর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকার মাছের খাবার বাকিতে কিনে টাকা দিচ্ছেনা। খাবারের টাকা না দিয়ে তিনি আমাকে মাছ ব্যবসার পার্টনার হতে বলেছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে হ্যাচারীতে যে মাছ আছে তা বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বললে সিসি ক্যামেরায় মাছ চুরির বিষয়ে দেখতে পাই। সেখানে হ্যাচারী এটেনডেন্ট রেজাউল ইসলাম এ কাজ করে। হ্যাচারীর পাশে বসবাসরত সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তিকে পাঠায়। সে নিজেও মাছ চুরি দেখতে পায়। এ বিষয়ে আমান উল্লাহ সাহেবকে জানালে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। হ্যাচারী এটেনডেন্ট রেজাউল ইসলাম চলতি বছরে বদলি হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় কর্মরত আছেন ।
মৎস্য হ্যাচারীর ডে লেবার আমির হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা মৎস্য হ্যাচারীতে কাজ করার কারণে আমরা খামারের কোয়ার্টারে থাকতাম। সেখানে হ্যাচারী এটেনডেন্ট রেজাউল ইসলাম প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বড়শি দিয়ে মণ মণ মাছ চুরি করার বিষয়ে প্রতিবাদ করি। যে কারণে আমাদের সবাইকে ওই বাসা থেকে চলে যেতে বলে। আমার বাবা আগে ৬ হাজার টাকার মাসিক পারিশ্রমিক পেতেন। তাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে একই পারিশ্রমিকে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। যেন এই কাজ আমার বাবা না করতে পারে।
জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সদর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে গাছের ডাল কাটা হয়েছে। কোন গাছ কাটা হয়নি। মৎস্য খাবার ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মানিক আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে তার সাথে আমার কোন লেনদেন নেই।
মাছ চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যে পুকুর আছে, সেখানে রেনু ও মাছ বিক্রি করে এবং উৎপাদন করে সরকারি কোষাগারে ৬ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। ঠিক সেই ভাবেই সরকারের টার্গেট পূরণ করে আমি কাজ করে আসছি।