ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে মানব পাচার এবং চোরাচালান পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। চলতি বছরের মাত্র দুইমাস, মে ও জুনের মধ্যে এই সীমান্ত এলাকা থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭২০জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একই সময়ে জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক ও চোরাচালান পণ্য। এই পরিসংখ্যান শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নয় বরং একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের ইঙ্গিতও বহন করে। ৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়ন জানায়, ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিজিবির নিয়মিত অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০৪জন ছিলেন যারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে ফিরে আসছিলেন। এদের মধ্যে ১০০জন নারী, ১০৫জন পুরুষ এবং ৯৯জন শিশু ছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছে ৪১৬জনকে। এদের মধ্যে নারী ১৮০জন, পুরুষ ১২৯জন এবং শিশু ছিল ১১৭জন। আটকদের মধ্যে আরও ছিলেন ৪জন দালাল, ৩জন ভারতীয় নাগরিক এবং ৪জন মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এই সময়কালে বিজিবির হাতে বিপুল পরিমাণ মাদক এবং চোরাচালান পণ্যও জব্দ হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে এক হাজার ১২৮ বোতল ভারতীয় মদ, এক হাজার ৬৯৫ বোতল ফেনসিডিল, ১৪ হাজার ৮৯৭ পিস ইয়াবা, দুই কেজি ২৭ গ্রাম হেরোইন, এক কেজি ৪৩০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৩৯০টি ভায়াগ্রা ট্যাবলেট এবং প্রায় ২০ কেজি গাঁজা। এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে ১১টি স্বর্ণের বার যার ওজন এক কেজি ৫২৭ গ্রাম এবং আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা। অভিযানে আরও উদ্ধার করা হয় ১২৯ বক্স আতশবাজি, ভারতীয় ওষুধ, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, চশমা এবং ভারতীয় মুদ্রা। এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সীমান্ত এলাকা চোরাচালান এবং মানব পাচারের জন্য কতটা সক্রিয় রুট হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত নারী, পুরুষ ও শিশু আটক হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে, সীমান্তে মানব পাচার একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় দালালরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলছে এবং জীবনহানির ঝুঁকি নিয়েও মানুষ পাচার করছে।
এদিকে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করছেন।’