ষোল’র বিজয় আমার ভাইয়ের রক্ত দিয়ে লেখা

দর্শনায় বিজয় মেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে আলী মুনছুর বাবু

দর্শনা অফিস: “লাল সবুজের নিশানে, বিজয় আমার গৌরবের” এ সেøাগানকে সামনে রেখে দর্শনা সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী মহান বিজয় মেলার গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো সমাপনি দিন। বরাবরের মতো দর্শনা সরকারি কলেজ মাঠে এ মেলার আলোচনা পর্বের আগে দর্শনার ৫ গুনিজন সম্মননাসহ সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন স্টোরের মালিকদের সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়।

সমাপনি সন্ধ্যায় আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের উদ্যাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস বিভিশিখাময় পরিস্থিতির মোকাবেলার মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্থ করে এ দেশের দামাল ছেলেরা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিলো আজকের এ বিজয়। ১৯৭১’র ৭ মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর অনলবর্ষী ভাষণে সাড়া দিয়ে অগ্নি স্পুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিলো এ দেশের লাখো দামাল ছেলে। এক সাগর রক্ত, ৩০ লাখ প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের সমভ্রমের বিনিময়ে সারাবিশ্বের বিস্ময় আজকের এ বিজয় গোটা বাঙ্গালী জাতীর মহাগৌরব ও অহঙ্কার। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে যারা অন্যদিকে প্রভাবিত করতে চাই, তারা স্বাধীনতার চরম শত্রু। ওই সব স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে মোকাবেলা করি। এ ধরণের বিজয় মেলা বর্তমান প্রজন্মকে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে। তাই আসুন বিজয়ের চেতনায় জাগ্রত হয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের রুখে দিই। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে ১৯৭১ সালে বীর বাঙ্গালী স্বাধীনতার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলো পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস আমারণ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে পেয়েছিলাম আজকের বিজয়। বঙ্গবন্ধুর জীবনে রয়েছে স্মরণীয় ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস। সেই সঠিক ইতিহাস আজকের প্রজন্মকে জানাতে হবে এ ধরণের বিজয় মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার, বাঙ্গালী জাতীর প্রথিকৃত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে যে কুচক্রী মহল সপরিবারে হত্যা করেছিলো, বাংলার মানুষ ওই নরপশুদের ঘৃনাভরে ধিক্কার দেবে অনন্তকাল। সকলকে মনে রাখতে হবে ষোল’র বিজয় আমার ভাইয়ের রক্ত দিয়ে লেখা ইতিহাস। এ ইতিহাস জনম জনমের ইতিহাস। সাম্প্রতিক সাংস্কৃতি সংগঠনের সভাপতি ও দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাম্প্রতিকের সাধারণ সম্পাদক ও দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম মল্লিক। সাম্প্রতিকের পক্ষ থেকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকাকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়। দৈনিক মাথাভাঙ্গার পক্ষে স্মারক গ্রহণ করেন দর্শনা ব্যুরো প্রধান হারুন রাজু ও সহকারী ব্যুরো প্রধান হানিফ মন্ডল। সাথে ছিলেন ব্যুরো সহকারী ইয়াছিন জুয়েল। পরে হিন্দোল সংগীত পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান ও সর্বশেষ কৌতুক শিল্পী মজিবর রহমান মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। এবারের বিজয় মেলার প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া বিনোদনের জন্য বাংলার ঐতিহ্যবাহি নাগরদোলাসহ শিশু-কিশোরদের আনন্দ দায়ক হরেক রকমের আয়োজনও ছিলো। রকমারি পসরা সাজিয়ে স্টোলের সংখ্যাও ছিলো অগণতি। সাম্প্রতিকের হারুন অর রশিদ জুয়েল, আব্দুল হান্নান দুলাল, বাকী বিল্লাহ, ইয়াছিন জুয়েলসহ সকল সদস্যের সার্বিক সহযোগিতায় ৭ দিনের এ বিজয় মেলা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ মল্লিক। এদিকে গত পরশু বুধবার মেলার ৬ষ্ঠ সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি থেকে আলোচনা করেন, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম। সাম্প্রতিকের সাবেক সভাপতি সরোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, কবি ও সাহিত্যিক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম। পরে কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের পরিবেশনায় নাটক ”নীল কুটি” মন্তস্থ হয়েছে। সবশেষে সংগীত পরিবেশন করেছেন শিল্পী বিরেন দাস।

Comments (0)
Add Comment