চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়ায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া : শোকে কাতর মেহেরপুরের মুজিবনগর

কুষ্টিয়া/মুজিবনগর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এসএম নুরুদ্দিন আবু আল বাকী রুমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার ভোর ৩টায় তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কুষ্টিয়া জেলায় এ প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। ডা. এসএম নুরুদ্দিন আবু আল বাকী রুমি (৪৮) মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের ইলিয়াচ হোসেনের ছেলে। তিনি এর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন ডা. রুমি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার শুক্রবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নুরুদ্দিন রুমি ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন। সন্ধ্যায় মেহেরপুর মুজিবনগরের দারিয়াপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে তাকে শেষ বিদায় দেন স্থানীয়রা। করোনাভাইরাস পরিরিস্থিতিতে অনেকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও দূর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সমবেদনা জানিয়ে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফেসবুক দুনিয়াজুড়ে যেনো দুঃখের কালোছায়া নেমেছে দারিয়ারপুর গ্রামের কৃতি এই চিকিৎসকের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায়ও।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ৩ জুলাই নুরুদ্দিনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ডায়াবেটিস রোগী হওয়ায় অবস্থার অবনতির আশঙ্কায় তাকে ওইদিন রাতেই ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তার শরীরের অবস্থা উন্নতির দিকেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দেখা দেয় প্রচ- শ্বাসকষ্ট। পরে শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ২২ জনের মৃত্যু হলো। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন এবং নারী ৪ জন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুমি কোভিড চিকিৎসায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করছিলেন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে গেলো ২ জুলাই নিজেই আক্রান্ত শনাক্ত হন। ৪ জুলাই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

ডা. রুমি মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক ও দারিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াচ হোসেনের ছেলে ডা. এস এম নূরুদ্দীন রুমি । ডা. রুমির বড় ছেলে মাহি ১০ম শ্রেণির ছাত্র, ২য় ছেলে রাহি ৭ম শেণীর ছাত্র ও ছোট ছেলে জাহি শিশু শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন। ডা. রুমির লাশের জানাজা পড়ান তার ভাই এসএম হাদি। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ান আহম্মেদ, মুজিবনগর থানার ওসি আব্দুল হাশেম। কোভিড ব্যবস্থায় তার দাফন কাফন করা হয়। এদিকে, ডা. এসএম নুরুদ্দিন আবু আল বাকী রুমি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত থাকাকালীন চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর অন্তরে জায়গা করে নেন। তার মৃত্যুতে দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক আহাদ আলী মোল্লাসহ শোক প্রকাশ করেছে মাথাভাঙ্গা পরিবার।

 

Comments (0)
Add Comment