তাহলে সিজারটা করলেন কে? ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন

আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অপারেশনের দায় নিচ্ছেন না কেউ

আলম আশরাফ: আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড ক্লিনিকে সিজারের সময় ভুঁড়ি বের হয়ে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অপারেশনের দায় নিচ্ছেন না কেউ। অভিযুক্ত ডাক্তাররা দাবি করেছেন, তারা ওই অপারেশনের সাথে জড়িত নন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ বিবৃতিও দিয়েছেন তারা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে ওই সিজারটা করলেন কে। তাহলে কি এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে অপারেশন করেছিলেন কেউ। যার অপরাশেনের কোনো অনুমতিই নেই। তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছে সচেতনমহল।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজু গ্রামের সাগর আলীর স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে গত শুক্রবার আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই দুপুরে প্রসূতির সিজার করা হয়। সিজার অপারেশন করার সময় নবজাতকের পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। পরদিন ওই নবজাতক মারা যায়। অভিযোগ ওঠে ইউনাইটেড ক্লিনিকের মালিক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক নিজেই অপারেশন করেন। এবিষয়ে গত শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় একটি সংবাদ প্রকাশ পায়। সংবাদে ইউনাইটেড ক্লিনিকের মালিক নাজমুল হক দাবি করে বলেন, ‘প্রসূতির অপারেশন করেছেন ডা. বিপাশা। জন্মের সময় ত্রুটির কারণে শিশুর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসে। এটা ডাক্তারের ত্রুটি নয়। এখানে কারও কিছু করার ছিলো না।’ সংবাদ প্রকাশের পর ডা. নাজমুল হক নিজেকে ইউনাইটেড ক্লিনিকের মালিক নই বলে দাবি করে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন আমি করিনি। অপারেশন করেছেন ডা. বিপাশা। ডা. নাজমুল হকের এমন বক্তব্যে পরদিন ডা. বিপাশা নিজে নির্দোষ দাবি করে প্রতিবাদ বিবৃতিতে দাবি করেন, ইউনাইটেড ক্লিনিকের ওই অপারেশন তিনি করেননি। ডা. বিপাশা বলেন, সাংবাদিকের নিকট ক্লিনিক মালিক নাজমুল আমার নামে যে তথ্য দিয়েছেন, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ওই সিজার অপারেশনের সঙ্গে আদৌ জড়িত নই। পুলিশ ও সিভিল সার্জনের তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদে ওই ক্লিনিকের কর্মচারীরাও কেউ আমার নাম উল্লেখ করেননি। ডা. বিপাশা সংবাদটির সংশ্লিষ্ট অংশটুকু মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেন।

গত রোববার পরিদর্শনে গিয়ে সাথে সাথে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কান্তি দাসও ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন। তিনি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়াও গতকাল মঙ্গলবার থেকে ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ। এ বিষয়েও সোমবার একটি প্রতিবেন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ডা. বিপাশা ওই প্রসূতির সিজার অপারেশন করেছেন বলে গত শনিবার দাবি করেন ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারের মালিক উপসহকারী মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক। তার এ দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ডা. বিপাশা। পরবর্তীতে ক্লিনিক মালিকের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রসূতির সিজার করেছেন ডা. আবু সালেহ ইমরান ও ডা. নজরুল। পরে ওই দুজন ডাক্তারও অপারেশনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ইউনাইটেড ক্লিনিকে প্রসূতির সিজার অপারেশন আমি করিনি। তবে সাংবাদিকের নিকট ক্লিনিক মালিক নাজমুল যে তথ্য  দিয়েছেন  তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কোনোভাবেই ওই অপারেশনের সাথে জড়িত নই। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছি। এছাড়া পুলিশ ও সিভিল সার্জন তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদে ওই ক্লিনিকের কর্মচারীরাও আমার নাম উল্লেখ করেননি।

আলমডাঙ্গা থানার এসআই সঞ্জীব কুমার অভিযোগের তদন্ত করছেন। তিনি জানান, ক্লিনিক মালিক নাজমুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দিতে গিয়ে ডা. বিপাশার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উল্লেখ করেছেন। অথচ, ডা. বিপাশার ওই ক্লিনিকে কিংবা ওই অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডা. বিপাশাও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করা শিশুটির ছাড়পত্রে উল্লেখ রয়েছে ডাক্তার নজরুল ইসলাম ও ডাক্তার ইমরানের নাম। কিন্তু তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনই ওই অপারেশনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ পুরোটাই জালিয়াতি। এখন চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ জানতে চায় রুমা খাতুনের সিজার অপারেশন করলেন কে? আর কার হাতেই বা শিশুর পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেল? কবে কখন এই ধোঁয়াশা কাটবে তার প্রতীক্ষায় আছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যবিভাগ নিশ্চয় এই ধোঁয়াশা কাটিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে সাধারণ মানুষ আশা করে।

 

Comments (0)
Add Comment