প্রতি কেজি পেঁয়াজে কৃষকের ২৫ টাকা খরচে আয় ১৫

পেঁয়াজে পর্যাপ্ত ফলন হলেও লোকসানে মেহেরপুরের কৃষকরা

মেহেরপুর অফিস: পর্যাপ্ত ফলন হলেও মেহেরপুরে পেঁয়াজের চাষ করে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে ২২-২৫ টাকা খরচ হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। কৃষকরা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মরসুমে আমদানি কমিয়ে বাজার মনিটরিং বাড়ালে তারা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। তবে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগের কারণে পেঁয়াজের গুণগত মান কম হওয়ায় পেঁয়াজচাষিরা দাম কম পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় দুই হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে, যা গত বছর তিন হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। দেশীয় ও সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ করে মেহেরপুরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভরা মরসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমাদানিতে (এলসি) লোকসানের মুখে পড়েন চাষিরা। এবারও দাম না থাকায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। মেহেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, পিরোজপুর, উজলপুর, মুজিবনগরের শিবপুর, মোনাখালী, সোনাপুর, টেংরামারি, আশরাফপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যায় শুধু পেঁয়াজের চাষ।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান অভিযোগ করে বলেন, পেঁয়াজের ভরা মরসুমে আমদানি কমিয়ে বাজার মনিটরিং বাড়ালে কৃষকরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। প্রতি বছরই ভরা মরসুমে বাইরের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, যার প্রভাব এ জেলার পেঁয়াজ চাষিদের ওপর পড়ে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২২-২৫ টাকা। আর বর্তমান বাজার মূল্য ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

একই গ্রামের আরেক কৃষক তপন আলী জানান, পর্যাপ্ত ফলন হলেও পেঁয়াজের চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বাড়তি। বাজারে অন্যান্য সব পণ্যের দাম বেশি হলেও পেঁয়াজের দাম কম। পেঁয়াজ চাষ করে অর্ধেক টাকাও উঠছে না।

কৃষক জুয়েল হোসেন বলেন, সরকার যদি কৃষকদের দিকে একটু তাকিয়ে পেঁয়াজের ভরা মরসুমে ভারতের এলসি বন্ধ করে ও বাজার মনিটরিং বাড়ায় তাহলে বাইরে থেকে আর পেঁয়াজ নেয়া লাগবে না। আমরা দেশে যারা পেঁয়াজ চাষ করি এতেই ভালোমতো পুষিয়ে নিতে পারবো।

পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সাইফুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজের মরসুমে অনেক ব্যস্ততা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ২৫-৩০ জনের গ্রুপ করে পেঁয়াজের ক্ষেতে কাজ করি। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজের মরসুমে জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন বাজার দখল করে মেহেরপুরে উৎপাদিত পেঁয়াজ। কিন্তু গুণগতমান কম হওয়ার কারণে জেলার কৃষকরা কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা করে দাম কম পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক সামসুল আলম জানান, মেহেরপুরের মাটি অত্যন্ত ভালো। কৃষি উর্বর জমি। কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কিন্তু জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগের কারণে পেঁয়াজের গুণগত মান কম হওয়ায় পেঁয়াজচাষিরা দাম কম পাচ্ছেন।

 

Comments (0)
Add Comment