মেহেরপুরের বারাদী বাজারে অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি, এলাকায় তোলপাড়

স্টাফ রির্পোটার: মেহেরপুরের বারাদী বাজারে অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা স্যানিটেরি ইন্সপেক্টর ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোর আগেই মাংস সরিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছে তারা। এ ঘটনা টক অব-দ্য বরাদীতে পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার সকালে বারাদী বাজারে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেহেরপুর সদর উপজেলার মোমিনপুর দাশপাড়ার নবীন শাহ’র একটি গাভী দীর্ঘ ২০ দিন অসুস্থ ছিল। কিছুদিন আগে গাভীটির পেট থেকে অপুষ্ট একটি বাচ্চা পড়ে যায়। গাভীটি উঠে দাঁড়াতে পারতো না। মঙ্গলবার রাতে মাত্র ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায় গাভীটি ক্রয় করেন স্থানীয় বারাদী বাজারের কসাই মোমিনপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ ও জাফরান, কলাইডাঙ্গা গ্রামের হায়াত আলী এবং রাজনগর গ্রামের শফি মীর, কাবরান আলী, কিয়ামত আলী ও মাফি মীর। তারা রাতের আঁধারে গাভীগরু গাড়িতে করে বাজারে নিয়ে বুধবার ভোর রাতে জবাই করে। সাথে একটি সুস্থ গরুও জবাই করেন। ভালো মাংসের পাশাপাশি অসুস্থ গাভীর মাংস বিক্রি করায় স্থানীয় জনগণ কসাইদের ওপর ফুঁসে উঠেছে। তবে উপজেলা স্যানিটেরি অফিসার ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছুলেও কসাইদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

গরুর মালিক নবীন শাহ’র স্ত্রী আনেছন খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, গরুটি দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলো এবং কসাই আব্দুল ওয়াদুদগং ১৫-১৬ হাজার টাকায় গরুটি কিনে নিয়ে যায়।

গরু জবাইকারী রাজনগর গ্রামের আব্দুল লতিফ মোল্লা জানান, গরুটি অসুস্থ ছিলো না। তবে কিছুটা কমা ছিলো। তার মাজায় লাগা ছিলো তাই উঠতে পারত না। অসুস্থ গরু জবাই করলেন কেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ভালো গরুর মধ্যে মাঝে মধ্যে এক একটা কমা গরু জবাই হতেই পারে। এতে দোষের এমন কি?

স্থানীয় বারাদী ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মোমিন জানান, অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। এ ধরনের কসাইদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা স্যানিটেরি ইন্সপেক্টর তারিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের দেওয়া তত্য মতে সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাকিবুল ইসলামসহ আমরা বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনো খারাপ মাংস পায়নি। হয়তো আমরা পৌঁছুনোর আগে তারা অসুস্থ গাভীর মাংস বিক্রি করে ফেলেছে কিংবা সরিয়ে ফেলতে পারে। তবে ওই সময় বাজার কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকসহ বহু লোক সেখানে অবস্থান করলেও কসাইদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেননি। খারাপ মাংস না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে জানতে চাইলে বাজার কমিটির সভাপতি লিয়াকত হোসেন জানান, তার নাতির অসুস্থতার কারণে তিনি ঝিনাইদহ ছিলেন। তবে তিনি বাড়ি ফিরে বারাদী বাজারে গেছেন এবং ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি এর ঘটনার নিন্দা করেন বলেন, ইতঃপূর্বে এসব কসাইরা মাংস কম দিয়ে জরিমানার শিকার হয়েছেন।

গরুর মালিক নবীন শাহ’র প্রতিবেশী জয়নাল জানান, গরুটি বাচ্চা পেটে দীর্ঘদিন পড়ে ছিলো। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি। আমার বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে ৩দিন পড়ে ছিল। আমি কেন প্রতিবশী অনেক লোক দেখেছে। এ ধরনের অসুস্থ গরু রোজা রমজান মাসে জবাই করে রোজাদারদের খাওয়ানো খুবই অন্যায়। বিবেকবান মানুষদের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

বারাদী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঘটনার সত্যতা আছে। এ ধরনের কর্মকা-ের বিচার হওয়া দরকার।

Comments (0)
Add Comment