সাবেক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা : জামিন নামঞ্জুর করে অভিযুক্ত মামুনকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া স্ত্রীকে পার্কে ডেকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত মামুন হোসেনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার মামুন জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে গত মঙ্গলবার মামুন হোসেনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। জখম সীমা আক্তারের পিতা মুনছুর আলী বাদি হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলাটি দায়ের করেন। অপরদিকে, সকল প্রকার আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য জখম সীমা আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংস্থা মানবতা ফাউন্ডেশন। তার পিতার আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সীমা আক্তারের সাথে দেখা করে তার যাবতীয় আইনি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেয় মানবতা ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ।

ঘটনার বিবরণ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ছয়খাদা গ্রামের মুনছুর আলীর মেয়ে প্রবাসীর স্ত্রী সীমা আক্তার ব্রাক কর্মী হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত ছিলেন। সে সময় পরিচয় হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে বিজিবি সদস্য মামুন হোসেনের সাথে। মামুন সেসময় সাতক্ষীরার নীলডুমুর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। এক পর্যায়ে সীমা ও মামুনের সম্পর্ক গড়াই বিয়েতে। বছর দুয়েক আগে সীমা তার স্বামীকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেন মামুনের সাথে। অবশ্য তখনও মামুনের প্রথম স্ত্রী ছিলো। বিয়ের পর সীমার প্রথম স্বামীর পাঠানো টাকা এবং নিজের বেতন থেকে গোছানো ব্যাংকে থাকা ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মামুন। এরপর থেকে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে গত বছরের শেষের দিকে বিজিবি সদর দফতরে মামুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন সীমা আক্তার। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামুন চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি মামুনকে তালাক দেন সীমা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মামুন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া স্ত্রীকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে ডেকে নেন মামুন। দুজনের কথাবার্তার এক পর্যায়ে ধারালো ছুরি বের করে সীমার গলায় পোঁচ মারার চেষ্টা করেন মামুন। এ সময় তাদের দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সিমার মুখে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক জখম করে মামুন। পরে ধারালো অস্ত্র নদীতে ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে সীমার চিৎকারে মামুনকে আটক করে পুলিশ। গুরুতর জখম অবস্থায় সীমাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।

এ ঘটনায় পরদিন বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অভিযুক্ত মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সীমা আক্তারের পিতা মনসুর আলী। ওইদিনই মামুনকে আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। সীমা আক্তারের পিতা মনসুর আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সকল প্রকার আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন মানবতা ফাউন্ডেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার মামুন জামিনের আবেদন করলে তাতে বাধা দেন আইনি সহায়তা প্রদানকারী মানবতা ফাউন্ডেশনের আইনজীবীরা। পরে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মামুনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

এদিকে গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সীমা আক্তারকে দেখতে যান মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকারসহ ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সীমা আক্তারের যাবতীয় আইনি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাড. নওশের আলী, সদর উপজেলা কমিটির সেক্রেটারি অ্যাড. মসলেম উদ্দীন-২, সমন্বয়কারী অ্যাড. মমতাজ বেগম, অপারেশন অফিসার অ্যাড. জীল্লুর রহমান জালাল। নদীতে ফেলে দেয়া ছুরি উদ্ধার এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিকে মামুনকে রিমান্ডে নেয়ার দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে।

 

Comments (0)
Add Comment