১১ কোটি টাকা খাটিয়ে ৭ কোটি টাকার আখ উৎপাদন

বছরের পর বছর লোকসান গুনছে দর্শনার কেরুজ কৃষি খামার

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলেছে সরকারি মালিকানাধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কৃষি খামার। প্রতিষ্ঠানটির চিনি তৈরির জন্য কৃষি খামারে বছরে ৭ কোটি টাকার আখ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। যার মানে, এক বছর শুধু আখ উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দেয় ৪ কোটি টাকার বেশি। গত পাঁচ বছরে কৃষি খামারে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লোকসান গুনেছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কৃষি খামারে চাষ না করে বাইরে থেকে আখ কিনলে এর চেয়ে কম খরচ হবে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কেরুজ কৃষি খামার লোকসান করেছে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
জানা গেছে, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ১৯৩৮ সালে নয়টি কৃষি খামার নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় থেকেই চাষিদের উৎপাদিত আখের পাশাপাশি কেরুজ কৃষি খামারে উৎপাদিত আখ দিয়ে কেরুর কারখানার চাহিদার বিরাট একটা অংশ পূরণ হতো। কিন্তু গত পাঁচ বছরের একটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কেরুজ কৃষি খামারে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়। যার থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার টন আখ পাওয়া যায়; যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ পরিমাণ আখ উৎপাদন করতে কেরুজের প্রতি বছর গড়ে খরচ হয় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছর এ বাবদ গড়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়। কৃষি খামারে শিডিউল অনুযায়ী শ্রমিকরা কাজ না করেই অতিরিক্ত বিল উত্তোলন, খামারের আখের জমিতে সার প্রয়োগের জন্য কারখানা থেকে সার উত্তোলন করার পর তা যথাযথভাবে প্রয়োগ না করে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া, সেটআপ অনুযায়ী খামারে যে পরিমাণ পাহারাদার প্রয়োজন তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পাহারাদারের বিল উত্তোলন করায় প্রতি বছরই খামারের লোকসান বাড়ছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধু খামারের পাহারাদারের বিল বাবদই প্রতি বছর ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এ টাকা সবাই মিলে ভাগ করে নেয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো পাহারাদারই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আখ মাড়াই মরসুমে খামারের আখ কাটার টেন্ডারেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে নিজস্ব লোকের বাইরে অন্য কাউকে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। এর ফলে আখ কাটতে উচ্চ মূল্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে ব্যাপকহারে অর্থের অপচয় করা হয়। সূত্র জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদারকির অভাব ও কৃষি খামারের সব ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের কারণে বছরের পর বছর লোকসান চলছেই। এ অবস্থায় মিলের নিজস্ব জমিতে আখ চাষের পদ্ধতিগত পরিবর্তন দরকার বলে মনে করছেন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘দেশে চিনি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। আমি কয়েক মাস হলো এখানে যোগদান করেছি। এসে দেখলাম আমাদের প্রায় ৩ হাজার ২০০ একর জমির কৃষি খামারে প্রতি বছর অর্ধেক পরিমাণ আখ চাষ করা হয়। প্রতি বছরই খামারে বিপুল লোকসান হচ্ছে। সর্বশেষ বছরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ দেয়া হবে জমিগুলো। এ বছর ৬০০ একর জমি লিজ দেয়া হবে। তাতে লোকসান না হয়ে মুনাফা করা যাবে। আমাদের ডিস্টিলারি থেকেই মূলত মুনাফা হয়। সারা দেশে ১৩টি ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হয়। দেশে চাহিদা আছে। সেজন্য ডিস্টিলারি পণ্য উৎপাদনের জন্য আরেকটি প্লান্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করি এতে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হবে।’

Comments (0)
Add Comment