বন্ধুর পিতা কৃষক শহিদুলকে ছুরিকাঘাতে খুন : রক্তাক্ত দুজন হাসপাতালে

দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে গণ্ডগোল
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছে ছেলে ইলফাজ হোসেন (১৬)। গতকাল শনিবার বেলা দেড়টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক শহিদুল ইসলাম (৪৫) একই গ্রামের তাহার আলীর ছেলে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালমর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ভারত সীমান্তবর্তী ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের চৌ-রাস্তার মোড় সংলগ্ন বড় মসজিদের সামনে আসে গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে কলেজছাত্র সুজন আলী (১৭), আশানুর রহমানের ছেলে জাকির হোসেন (১৬) ও শহিদুল ইসলামের ছেলে ইলফাজ হোসেন (১৬)। তিন বন্ধু দুপুরের দিকে মোবাইল ফোনে অনলাইনে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলছিল। একপর্যায়ে জাকিরের সাথে সুজনের কথা কাটাকাটি হয়। জাকির ও ইলফাজ সম্পর্কে চাচাতো ভাই হওয়ায় ইলফাজ জাকিরের পক্ষে কথা বললে সুজন আলী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং দুজনকে মারধর করে। এ সময় ইলফাজের পিতা শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে মারধরের প্রতিবাদ করেন। এতে সুজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং দ্রুত বাড়িতে গিয়ে ছুরি নিয়ে আসে। বন্ধু ইলফাজ ও ইলফাজের পিতা শহিদুল ইসলাম কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ওপর ছুরি নিয়ে হামলে পড়ে সুজন আলী। তার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে শহিদুল ইসলাম ও ছেলে ইলফাজ গুরুতর আহত হয়। তাদের রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বেলা ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন শহিদুল ইসলামকে। ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শহিদুলের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান তিনি। আহত ইলফাজ ও জাকির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই অবস্থা বেগতিক বুঝে ঘাতক সুজনসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দেয়। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মাহবুবুর রহমান ও ইন্সপেক্টর (অপরেশন) আবু সাঈদ। আশপাশ এলাকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন তারা। শুরু হয় দফায় দফায় গ্রেফতার অভিযান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম এবং এএসপি সাজিদ। নিহত শহিদুল ইসলামের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। এ রিপোর্ট লেখার সময় সুজনসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছিলো বলে থানাসূত্রে জানা যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহিদুল হত্যাকা-ের মূলহোতা সুজনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ওসি কাজল জানান, সুজনকে গ্রেফতারে পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযান রয়েছে অব্যাহত। খুব শিগগিরই সুজনসহ অভিযুক্তরা ধরা পড়বে। আজ রোববার শহিদুলের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারে পুলিশ।
এদিকে দিন-দুপুরে জনবহুল এলাকায় ছুরিকাঘাতে হত্যাকা-ের ঘটনায় বিরাজ করছে আতঙ্ক। দর্শনা থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। খুনের ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Comments (0)
Add Comment