অভিজিৎ হত্যা: ৫ জঙ্গির ফাঁসি একজনের যাবজ্জীবন

স্টাফ রিপোর্টার: বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদ- ও এক আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচ আসামিকে অপর এক ধারায় ছয় মাসের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। আদালতের ৩২ কার্যদিবসে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘জননিরাপত্তা বিঘিœত করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করে যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মতপ্রকাশ করতে না পারে- এজন্য অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেন বিচারক।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ও মো. আরাফাত রহমান। আর আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। মোট ছয় আসামির মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত প্রথম দুজন পলাতক ও বাকিরা কারাগারে। দ-িত আসামিদের মধ্যে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হুসাইনকে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায়ও মৃত্যুদ- দিয়েছেন একই বিচারক। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দীপন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ দেশে আসেন। ওইবার একুশে বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অভিজিৎ বইমেলায় যান। মেলা থেকে ফেরার সময় রাত সাড়ে ৮টায় টিএসসি চত্বরের সামনে স্ত্রী বন্যা আহমেদসহ হামলার শিকার হন তিনি। জঙ্গি হামলায় অভিজিতের মাথার মগজ বের হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হামলায় চাপাতির আঘাতে বন্যার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মর্মান্তিক এ ঘটনার পাঁচ বছর ১১ মাস ১৮ দিন পর এ রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাদের মৃত্যু পরোয়ানা ও সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রায় উপলক্ষে মঙ্গলবার আদালত চত্বরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়। এ সময় আসামিদের হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিলো। তারা একে অপরের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলেন। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বিচারক রায় পাঠ শুরু করেন। ৫০ পাতার রায়ের কিছু অংশ পাঠ করেন বিচারক। রায় ঘোষণা শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর আসামিদের ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারে নেয়ার উদ্দেশে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় আসামিদের মধ্যে দুজন সাংবাদিকদের আঙুল তুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। এদিকে রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন ও মো. নজরুল ইসলাম এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। অভিজিতের পরিবারের কেউ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন না।

Comments (0)
Add Comment