করোনা প্রণোদনা বঞ্চিত উপজেলা পর্যায়ের নার্সরা

স্টাফ রিপোর্টার: দুই বছর আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের সেবায় যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এগিয়ে এসেছিলেন তাদের অনেকেই নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করছেন। দফায় দফায় আবেদন-নিবেদন করেও সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোভিড ইউনিটে দায়িত্বপালনকারী নার্সরা। অথচ সরকার ওই খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে নার্সদের অধিকার রক্ষায় সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২২।
দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী নার্স নেতৃত্বের বিকল্প নেই- বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান ও নার্সদের অধিকার সংরক্ষণ করুন।’ দিবসটি উপলক্ষ্যে নার্সিং ও মিউওয়াইফারী অধিদপ্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি সব নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি নার্স আক্রান্ত এবং ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ সম্মানী ঘোষণার পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৮৩ জনের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়ছে। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৫৫২ জন সম্মানী পেয়েছেন।
সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজনীন আক্তার লিলি বলেন, কোভিড ইউনিটে দায়িত্বপালন কালে নিজেও আক্রান্ত হয়েছি। ফুসফুসে পানি জমে অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অবশেষে বেঁচে যাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও একাধিকবার আমার খোঁজখবর নেন। অথচ তিনবার আবেদন করেও প্রণোদনার টাকা পাইনি। মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা বেগমেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, হাসপাতালে আমার ওয়ার্ডে প্রথম যখন করোনা রোগী ধরা পরে। তখন কী যে আতঙ্ক ছিল বোঝাতে পারব না। আত্মীয়স্বজনও ভয়ে কাছে আসেনি। ওই অবস্থায় রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করেছি। প্রণোদনার ঘোষণায় খুশি হয়েছিলাম। দুই বছর পার হলো অথচ কিছুই পাননি। যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক নার্সই সম্মানী পাননি।
জানতে চাইলে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাজেট) ড. এনামুল হক বলেন, করোনাকালে সরকার যেসব হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষণা করেছিল। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মাধ্যমে। অধিদপ্তর যেসব হাসপাতালের তালিকা দিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে সেখানে উপজেলা পর্যায়ের কোনো হাসপাতালের নাম ছিল না। এছাড়া আবেদন করলেই যে সবাই পাবে বিষয়টা তাও নয়। যারা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কাজ করছে, শুধু তাদেরই পাওয়ার কথা। আমার জানামতে কোনো আবেদন ঝুলে নাই। তাছাড়া ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও নার্সিং অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

Comments (0)
Add Comment