খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আজ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারটি সরকার পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি গতকাল রাতে বলেন, শনিবার (আজ) আমরা মতামত দিব। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রাত ৮টার পর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়াকে আজকেও (গতকাল) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে মেডিক্যাল বোর্ড। তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে তবে অধিকতর চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ নেয়া যেতে পারে। ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার যেসব পরীক্ষা বৃহস্পতিবার এবং গতকাল সকালে করানো হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সেগুলো রিভিউ করেছেন। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার বুকের অবস্থা দেখেছেন। তিনি এখনো সিসিইউতে আছেন। সরকার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দিলে পরে বিদেশে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা থাকবে কি-না তা মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছি।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি চললেও তা নিয়ে নানা জটিলতা ও অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। বিদেশে নেয়ার লক্ষ্যে নানা প্রস্তুতির পাশাপাশি নতুন পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করলেও গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত তা হাতে পায়নি তার পরিবার। তার ভিসা পাওয়া নিয়েও আছে জটিলতা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন চিকিৎসক বলেন, ৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘ উড়োজাহাজ ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি তার পাসপোর্ট নবায়ন, যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি হয়নি। কিন্তু, এই স্থিতিশীলতা ভালো লক্ষণ নয়। ছয় বা আট ঘণ্টার ফ্লাইটে বিদেশে নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই। অক্সিজেন ছাড়া তার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষণীয়ভাবে ঘটছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে যুক্তরাজ্যে নেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সেখানে তার বড় সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের একটি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে তার পরিবার। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া মাত্রই খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে, কোন হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানো হবে বা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বিশেষ ফ্লাইট বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রক্রিয়াটির সমন্বয় করছেন। বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকারের ছাড়পত্র পাওয়াটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা, খালেদা জিয়া দেশ ছাড়তে পারবেন না এই শর্তেই সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ বিষয়ে রবিবার তিনি তার মতামত জানাতে পারেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশ সংশোধন করা হলে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন। সরকার অনুমতি দিলেই তার ভিসার আবেদন করা হবে।

Comments (0)
Add Comment