খালেদা জিয়ার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক : পরানো হলো রিং

বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর পরীক্ষায় হৃদযন্ত্রে ব্লক ধরা পড়ায় রিং পরানো হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি-প্রধানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের সিসিইউতে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তার জীবন রক্ষার জন্য দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের নভেম্বরে তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। ওই সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন টানা ৮১দিন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল বোর্ড ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণে পরিবারের সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়া বাসা থেকে রাত ২টা ৫৫ মিনিটে বের হন। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আগের দিন থেকে খালেদা জিয়ার হার্টে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। তবে খালেদা জিয়া কাউকে কিছু জানাননি। সন্ধ্যায় চেকআপ করতে গিয়ে তার হার্টের সমস্যা পান চিকিৎসকরা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আগে থেকেই খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে হার্টের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা এবং তার হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের এই মেডিকেল বোর্ডে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন-উজ জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ারও ছিলেন। পরে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করা হয়। সেখানে তার হার্টে বেশ কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে। তার মধ্যে একটি ব্লক ছিল ৯৯ শতাংশ। সেটিতে রিং পরানো হয়। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। হাসপাতালে থাকতে থাকতেই তার উপসর্গ এসে যায়। সেটা হচ্ছে, তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন চিকিৎসকরা এনজিওগ্রাম করেন। এতে দেখা যায়, তার মেইন আর্টারিটা ৯৯ ভাগ ব্লক। সেখানে চিকিৎসকরা সফলভাবে স্টেইন্ট করেছেন। ডাক্তাররা আশাবাদী, এই চিকিৎসার ফলে তিনি হার্টের সমস্যা থেকে সাময়িকভাবে মুক্ত হলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের দুই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ তার দ- স্থগিত করে বিশেষ বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় থাকছেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

 

Comments (0)
Add Comment