চুয়াডাঙ্গায় নবনির্মিত মাথাভাঙ্গা সেতু উদ্বোধনকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতাদের বক্তব্য এখন জনগণের বিনোদনের উৎস
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি নেতাদের বক্তব্য জনগণের জন্য বিনোদনের উৎসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গার নবনির্মিত মাথাভাঙ্গা সেতুসহ খুলনা সড়ক অঞ্চলাধীন দুটি সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা নিজেরা দেউলিয়া হয়ে এখন সর্বহারাতে রূপ নিতে যাচ্ছে তাদের অন্যদের নিয়ে কথা বলা হাস্যকর। প্রকৃতপক্ষে বিএনপিই এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। যারা জনগণের পাশে যেতে ভয় পায় এবং জনগণও যাদের ত্যাগ করেছে তারাই এখন দেউলিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও নির্বাচন ও আন্দোলনে যেতে ভয় পায়। এজন্য তারাই দেউলিয়া। যে দল বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দেয় তাদের দেউলিয়াত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় না বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
সাতক্ষীরা-আশাশুনি-গোয়ালডাঙ্গা-পাইকগাছা সড়কে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০৫ মিটারের দৈর্ঘ্যরে মানিকখালী সেতু এবং কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনি) মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত মাথাভাঙ্গা সেতু উদ্বোধন করে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, সেতু দুটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। কারণ মাথাভাঙ্গা সেতুটির ফলে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মুজিবনগরে প্রস্তাবিত যে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হবে সেটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
খুলনা-যশোর মহাসড়কের দুরাবস্থা দূর করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে সেতু মন্ত্রী বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব খুলনা-যশোর সড়কের কাজ শেষ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। উন্নয়নমূলক কাজগুলোর অগ্রগতি যেন আরও ভালো হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে। সেতু মন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে এর থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। আমাদের বাস মালিকরা কথা দিয়েছেন, কিন্তু তারা যদি কথা না রাখেন, আমাদেরও কঠিন ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। যৌথ অভিযানের মাধ্যমে কিছুটা সফলতা আসছে, তারপরও ঢাকা চট্টগ্রাম সিটিতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ আসছে। তাছাড়া, যাত্রীর সাথে যে সকল ড্রাইভার-হেলপার খারাপ আচরণ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দেও প্রতি অনুরোধ করছি।
উদ্বোধনী উপলক্ষে মাথাভাঙ্গা সেতু প্রান্তেও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস, কুষ্টিয়া সড়ক সার্কেলের ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদ করিম, জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. শামসুজ্জোহা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জহুরুল কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগসূত্রে জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুনে। ৩ স্প্যান বিশিষ্ট সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৪০.০০৬ মিটার ও প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। এ সেতুটির কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে ২ বছর। পুরোনো সেতুর পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে নতুন এই সেতু। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রায় মাস খানেক ধরে যানবাহন চলাচল করা শুরু করে। শুধু ছিলো উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুটি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে যান চলাচল শুরু হলো। নতুন সেতু পেয়ে দুর্ভোগ শেষ হলো চুয়াডাঙ্গাবাসীর।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় মাথাভাঙ্গা সেতু। এটি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার একমাত্র সংযোগ সেতু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বোমা হামলায় সেতুর পূর্ব দিকের কিছু অংশ উড়ে যায়। পরে ভাঙা অংশ পুনরায় নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করা হয়। ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সেতুর মাঝের অংশ ধসে যায়। ধসে যাওয়া অংশ ইস্পাতের পাটাতন দিয়ে মেরামত করা হয়। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আবারও একটি অংশ ধসে পড়ে। এরপর থেকেই ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় সড়ক বিভাগ। এরপর ২০১৯ সালের ১১ জুন আবারও ফাটল দেখা দেয় সেতুতে। এতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ৪ মাস ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেটা মেরামত শেষে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে নতুন করে ওই পুরাতন সেতুর পাশে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক বিভাগ। ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

Comments (0)
Add Comment