জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরাও মাঠে

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছেই। বিশেষ করে গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থীরা অনেকেই এবারও নির্বাচনি মাঠে থেকে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে মনোনয়নপত্রও কিনেছেন কেউ কেউ। প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিলেও অনেকেই মাঠে থেকে ভোটের হিসাব মেলাচ্ছেন। পাশাপাশি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সভা ও আলোচনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে বিএনপি বা অন্য দলগুলো না থাকায় নানা মাধ্যমে উন্মুক্ত নির্বাচনের দাবিও তুলছেন। মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতা এখনো ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের কাছে শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির চালাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন-বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের অবস্থান আগের মতোই কঠোর। সুতরাং দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে অবশ্যই তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ রোববার সন্ধ্যায় বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে ত্যাগী ও যোগ্যদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গতবারের কিছু বিদ্রোহী এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা কোনো বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেইনি। কারণ এটা আমাদের আগেরই সিদ্ধান্ত ছিলো। এবারও কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা আগামীতেও আর কোনোদিন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬১ জেলার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫০০ নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। ৩১ জেলার নতুন মুখ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন আগে দলের সমর্থন পেয়েও পরাজিত হয়েছিলেন। এছাড়া গতবারের একজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গায় শামসুল আবেদীন খোকন, জামালপুরে ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, রাজশাহীতে মোহাম্মদ আলী সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরায় নজরুল ইসলাম, মেহেরপুরে গোলাম রসুল, পিরোজপুরে মহিউদ্দিন মহারাজ, পটুয়াখালীতে খান মোশারেফ হোসেন (মারা গেছেন), শেরপুরে হুমায়ুন কবীর রুমান, সুনামগঞ্জে নুরুল হুদা মুকুট বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাদের অনেকেই এবারও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, নরসিংদী, শরীয়তপুর, মাগুড়া, পাবনা, লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকে এবারও নির্বাচনি মাঠে থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত নির্বাচনে নোয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এবিএম জাফর উল্যাহ নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ছিলেন একেএম জাফর উল্যাহ। এবার নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টুকে। এই জেলায় এবারও একেএম জাফর উল্যাহর শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রব মুন্সী। তার এবারও মাঠে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাবনায় গতবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন রেজাউর রহিম লাল। এবার আ স ম আব্দুর রহিম পাকনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে এ জেলায় কামিল হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মাঠে ছিলেন। এবারও তিনি ভোটে থাকতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। তিনি দলের মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরদিন রোববার নির্বাচন অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন। নরসিংদী জেলা পরিষদে গতবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আসাদুজ্জামান। তার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে আব্দুল মতিন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন।

রাজশাহী জেলা পরিষদে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাহবুব জামান ভুলু। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার বিজয়ী হন। এবার সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। রাজশাহীতে এবারও মোহাম্মদ আলী সরকারের নির্বাচনি মাঠে থাকার সম্ভাবনা আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন মো. শফিকুল আলম। দলীয় প্রার্থী সৈয়দ এমদাদুল বারীকে পরাজিত করেছিলেন। এবার এই জেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আল মামুন সরকার। মো. শফিকুল আলম মনোনয়ন না পেলেও এবারও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থেকে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬৩ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি এই নির্বাচনের ভোটার।

Comments (0)
Add Comment