জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যস্ত আ.লীগ : জনপ্রিয়তায়ই মিলবে মনোনয়ন

মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন ঢাকায় : সমর্থন পেতে লবিং তদবির আর দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ১৭ অক্টোবর। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে প্রায় প্রতি জেলায় আওয়ামী লীগের ৪-৫ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত তারা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি চালাচ্ছেন জোর লবিংও। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধারনা দিচ্ছেন। এদিকে নিজ সমর্থকদের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে মাঠে নেমেছেন প্রভাবশালী রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সাংগঠনিক রিপোর্ট ও বিভিন্ন জরিপে এই মুহূর্তে যাদের জনপ্রিয়তা বেশি, তারাই দলের সমর্থন পাবেন। রোববার থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। ১০ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত হবে প্রার্থী তালিকা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ শুক্রবার বলেন, নির্বাচনে আগ্রহীরা ফরম কিনে জমা দেবেন। এ ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। প্রার্থীদের মধ্যে এই মুহূর্তে যাদের বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। কারণ রাজনীতিতে সব সময় এক রকম জনপ্রিয়তা থাকে না। এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন রিপোর্ট যখন আমরা দেখি তখন ধারণা পাই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বিশাল সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক আছে। সুতরাং প্রতিটা জেলাতেই আমরা জানি কারা আছেন, কারা আবার হতে চান। সুতরাং কে বেশি জনপ্রিয়, কাকে দিলে সবাই খুশি হবেন, সহজভাবে মেনে নেবেন, এসব তথ্য বিবেচনা করেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। বিগত ৫ বছর যারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তাদের বেশির ভাগ বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। এই নেতাদের মধ্যে যাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য দলের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। এই তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। মূলত ওই তালিকা থেকেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে যোগ্য প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। জেলা পরিষদের নির্বাচন সরাসরি ভোটে হয় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে থাকেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদলের হাতেগোনা প্রার্থীরা জয়ী হন। ফলে এই নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীরা যেহেতু আওয়ামী লীগের তাই এ নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জানা যায়, প্রতিটি জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৪-৫ জন করে নেতা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতা। বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন পাঁচ নেতা। রাজশাহী জেলাতে অন্তত পাঁচজন নেতা ভোটের মাঠে রয়েছে। তারা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং ভোট প্রার্থনা করছেন। সারা দেশে এই সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতার হত্যার পর কঠিন দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছিলাম। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। পুরো জেলায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছি। এখন শেষ বয়সে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চাইব। সবদিক বিবেচনা করে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মাথা পেতে নেব।’ পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. মহিউদ্দিন মহারাজ। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা থাকায় নির্বাচন সামনে রেখে তার পক্ষে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চোখে পড়েছে। ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দক্ষিণের অন্যতম জেলা পিরোজপুর। যেখানে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৪৭ জন। এর মধ্যে ৭০৪ জন ভোটারই জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষর সংবলিত একটি বই পাঠিয়েছেন বলেও জানা যায়। অগ্রিম সমর্থন দেয়ার বিষয়ে মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের (জনপ্রতিনিধি) কাছ থেকে এমন ভালোবাসা ও স্বীকৃতি পাওয়া নিশ্চয়ই আমার জন্য সৌভাগ্যের। দায়িত্বে থাকাকালে আমি সব সময়ই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেছি।’ এটা জেলা পরিষদের দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন। এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে দল প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এবারেই প্রথম প্রার্থীর কাছে দলীয় ফরম বিক্রি শেষে মনোনয়ন বোর্ডেও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রার্থী বাছাই করা হবে। রোববার থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে দলটি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা ফরম বিক্রি ও জমা দেয়ার কাজ চলবে। ফরম বিক্রি ও জমা দেয়ার কাজ চলবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। ওই দিনের বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। এদিকে এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামি বা বামদলগুলোর তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপি নেতারা আগেই স্পষ্ট করে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। ২০১৬ সালের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। অন্য দলগুলোতেও নেই তেমন তোড়জোড়। ২৩ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলা পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। এতে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬৩ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন। তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।

Comments (0)
Add Comment