ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যায় আসামির মৃত্যুদণ্ড 

রায় শুনে বাবা স্বজনরা বললেন আলহামদুলিল্লাহ : দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে আসামি ইকবাল হোসেনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহের জেলা ও দায়রা জজ মো. নাজিমুদ্দৌলা এ দ-াদেশ দেন। একইসঙ্গে তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে রায় ঘোষণার সময় ইকবাল হোসেন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। দ-িত ইকবাল হোসেন শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমাইল হোসেন জানান, শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামের ইকবালের সঙ্গে তার বাবার টাকা সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে বিরোধ হয়। এর জের ধরে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আসামি ইকবাল কার্টুন দেখানোর কথা বলে নিজের ঘরে ভাতিজা সাফিন, আমিন ও ভাগনে মাহিনকে ডেকে নেয়। এরপর তাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে ঘর আটকে গ্যাসের সিলিন্ডার খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাফিন ও আমিন দগ্ধ হয়ে মারা যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাগনে মাহিনও মারা যায়। এ ঘটনায় সাফিন ও আমিনের বাবা দেলোয়ার বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ইকবালকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ইকবাল জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর থেকেই ইকবাল পলাতক।

তিনি জানান, তদন্ত শেষে পুলিশ ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইকবালকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত ওই মামলায় একমাত্র আসামি ইকবালকে মৃত্যুদ- ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।

এ দিকে হত্যাকা-ের ঘটনার পর শৈলকুপার সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে শহরে শোক র‌্যালি, বিক্ষোভ মিছিল, থানা ঘেরাও ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দেয়া হয়।

মামলার রায়ে খুশি হয়েছেন মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের মা শিউলী খাতুন। তিনি বলেন, আদালত আসামিকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। এখন তিনি আশা করছেন, আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করা হবে।

দুই ছেলেকে হারানোর পর শিউলী খাতুনের কোলজুড়ে এসেছে আরেক ছেলে সন্তান মো. আবদুল্লাহ। চার বছরের এই ছেলেকে নিয়ে তিনি বেঁচে আছেন। রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তিনি আতঙ্কে আছেন জানিয়ে শিউলী বলেন, ‘সারাক্ষণ ভয় হয়, নতুন করে কিছু না ঘটায়। শুনেছি, ইকবাল জামিনে বের হওয়ার পর থেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গত পাঁচ থেকে ছয় মাস সে আদালতে হাজিরা না দিয়ে পলাতক।’

এদিকে, বুধবার দুপুর ১টা। কর্মস্থল ঝিনাইদহের শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বসে আছেন দেলোয়ার হোসেন। বুধবার তার দুই ছেলে মোস্তফা সাফিন (৭) ও মোস্তফা আমিন (১০) ও ভাগিনা মাহিন হাসানকে (১২) পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ের দিন ঠিক ছিলো। কিন্তু তা জানতেন না দেলোয়ার।

রায়ের অনুভূতি জানতে দেলোয়ারকে ফোন করলে তিনি আঁতকে ওঠে বলেন, আমি তো জানি না ভাই, কী রায় হয়েছে? হত্যাকারী আপন ভাই ইকবালের মৃত্যুদ-ের কথা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর বলেন, একটু পরে কথা বলছি।

হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি পৌর এলাকার কবিরপুর গ্রামে। ইকবাল ও দেলোয়ার কবিরপুর গ্রামের সার ব্যবসায়ী গোলাম নবীর ছেলে।

জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন একসময় বিদেশে থাকতেন। দেশে ফিরে বাবা গোলাম নবীর কাছে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চান তিনি। এ নিয়ে প্রায়ই বাবা-ছেলের মধ্যে বাকবিত-া হতো। দ-প্রাপ্ত ইকবালের বাবা-মা তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে বসবাস করতেন। টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে তাদের হত্যা করাসহ নানা হুমকি দিতেন ইকবাল।

এরই একপর্যায়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইকবাল হোসেন তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোস্তাফা সাফিন (৯) ও মোস্তফা আমিন (৭) ও বোন জেসমিন আক্তারের ছেলে মাহিনকে (১২) মোবাইল ফোনে কার্টুন দেখানোর কথা বলে নিজের ঘরে ডেকে নেন। ঘরে নেয়ার পর তাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ইকবাল। ওই তিন শিশুকে সেফটি বেল্ট দিয়ে জানালায় বেঁধেও রাখেন তিনি। পরে ঘরে রাখা গ্যাসের সিলিন্ডারের মুখ খুলে আগুন ধরিয়ে দেন ইকবাল। সেই আগুনে পুড়িয়ে মারা যায় ওই তিন শিশু। শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাই উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছেন। যা হয়েছে এটা তো আর ফিরে পাবো না। প্রশাসন ইকবালকে আটক করে রায় কার্যকর হলেই আমি শান্তি পাবো।

Comments (0)
Add Comment