ডিসি সম্মেলন সমাপ্ত : ঘুরেফিরে আলোচনায় আগামী নির্বাচন

জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার: তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এবারের সম্মেলনে একক কোনো বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়নি। সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ডিসি জানান, সম্মেলন থেকে অনেক শেখার আছে। তবে ঘুরেফিরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই বেশি কথা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের শেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ছিল এটি। এ কারণেই জাতীয় নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ডিসিদের সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনায় জনসম্পৃক্ততা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়টি উঠে আসে। ডিসিরা জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন। তাই প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব-সবাই ডিসিদের নির্বাচনকেন্দ্রিক পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী জনমুখী প্রশাসন গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। গত ১৪ বছরে সরকার যেসব উন্নয়ন করেছে, তা প্রচারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ডিসিদের। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসি হিসাবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের কোথাও আর নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। যে রাস্তাগুলো বিদ্যমান, সেগুলো মেরামত করতে চাই। ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে চাই। যেগুলো আছে, তা মেরামত করা আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে ডিসিদের আরও বেশি জনসম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। সেবাপ্রার্থীদের সম্মান দিতে হবে।’ তথ্য, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগমন্ত্রী নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়ে কথা বলেন।

ডিসি সম্মেলন উপলক্ষ্যে এর আগে রোববার সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সব নির্বাচনেই মাঠ প্রশাসন সহযোগিতা করে থাকে। অতীতে নির্বাচনে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা থেকে মাঠ প্রশাসন অগামী নির্বাচনেও সহযোগিতা করবে।’ ডিসি সম্মেলন হলো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এতে অংশীজন থাকেন বিভাগীয় কমিশনাররা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকেন। সম্মেলনে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, এবারের সম্মেলনে সরকার ডিসিদের জনসম্পৃক্ততার বার্তা দিয়েছে। মন্ত্রীরা ডিসিদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ নির্বাচনের প্রস্তুতিসংক্রান্ত অনেক উপদেশ দিয়েছেন। সম্মেলনে ডিসিরা যে লিখিত প্রস্তাব পাঠান, সেসব নিয়ে অধিবেশনগুলোয় মতবিনিময় হয়েছে। পরে সেসব প্রস্তাবের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

একাধিক ডিসি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। পুরো প্রশাসনই নির্বাচনমুখী। এ সময় সরকার জনমুখী হতেই পারে। এজন্য জনসেবা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়ে এবার বেশি আলোচনা হয়েছে।’

একাধিক সূত্র জানায়, খাদ্য উৎপাদন সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি। তা বাস্তবায়নে সম্মেলনে জোরালো নির্দেশনা ছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে তেল পাচার বন্ধ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো জনকল্যাণমুখী। জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কাজ করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এবারের ডিসি সম্মেলনে মাঠ প্রশাসন থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব এসেছে। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সচিবদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, পরামর্শ এবং ব্যাখ্যা পেয়েছেন ডিসিরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সব প্রস্তাব একসঙ্গে বাস্তবায়ন সম্ভব না। তবে অনেকগুলো বাস্তবায়নযোগ্য এবং এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব বলেও আশা করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক প্রস্তাব ঘুরেফিরে প্রতিবছরই আসে। তবে সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। হলে ভালো হতো।

Comments (0)
Add Comment