ডুবে যাওয়া ফেরি এক চুলও সরাতে পারেনি হামজা

আরও পাঁচ পণ্যবাহী ট্রাক উদ্ধার : গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি পরিদর্শন
স্টাফ রিপোর্টার: মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ১৪টি ট্রাক ও ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ ফেরি উদ্ধার হয়নি। ফেরিটিকে এক চুলও সরাতে পারেনি উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর অভিযানে পদ্মায় ডুবে যাওয়া ৫টি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করেছে এ জাহাজ। এদিন ফেরি ডুবির ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করে হামজা। আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় চাঁদপুর থেকে বুধবার রওয়ানা দিলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছেনি। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাজাহান বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত রো রো ফেরি আমানত শাহর যে ওজন তাতে দুটি জাহাজ মিলে চেষ্টা করেও সফল হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধার ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ফজলুর রহমান জানান, সরকারী যে উদ্ধারকারী জাহাজ আছে তাদের সক্ষমতার বাইরে ফেরি আমানত শাহর ওজন। ফলে উদ্ধারকাজে অংশ নিতে রওয়ানা হওয়া জাহাজ প্রত্যয় দিয়েও ফেরিটি উদ্ধার করা আদৌও সম্ভব কিনা তা বলা কঠিন। তবে সেক্ষেত্রে অন্য কোনোভাবে ফেরিটি উদ্ধার করা যায় কিনা- নিমজ্জিত পন্যবাহী ট্রাক উদ্ধারের পর টেকনিক্যাল কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি জানান, বেসরকারি উদ্ধারকারী জাহাজ যেগুলোর উদ্ধার ক্ষমতা ১ হাজার টনেরও বেশি, সেগুলো দিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। তারা ডুবে যাওয়া ফেরির মাস্টার ও ফেরিতে থাকা ট্রাকের চালক-মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (আইসিটি) রকিবুল ইসলাম তালুকদার, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ, মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুবায়ের ইবনে আউয়াল, ফরিদপুর অঞ্চলের নৌপুলিশের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (কারিগরি) মো. রাশেদুল ইসলাম। এছাড়া মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারাও ফেরি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক (বাণিজ্য) আশিকুজ্জামান জানান, ফেরি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে কারো গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পদ্মায় ডুবল দুই তরুণের স্বপ্ন : তরুণ ট্রাক মালিক শোয়েব। তার ট্রাকটি পটুয়াখালী থেকে একটি নিলামের লৌহজাতীয় পণ্য নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল গাজীপুর। কিন্তু ফেরিডুবিতে তার ট্রাকটি দুদিন ধরে পদ্মায়। তরুণ ওই পরিবহণ ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংকে জমি মর্টগেজ রেখে ঋণ করে একটি ট্রাক কিনেছিলেন। এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই তার। শোয়েব বলেন, যারা অনেক গাড়ির মালিক, তারা হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আমরা যারা ঋণ করে গাড়ি কিনেছি, তাদের কী হবে? তাই সরকারি সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সাইদুজ্জামানের বাড়ি মাগুরার সীমাখালী এলাকায়। জমানো টাকা আর ব্যাংকঋণ নিয়ে তিনি ট্রাক কিনেছিলেন। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি জমা দিয়েও ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু বুধবার ফেরিডুবির ঘটনায় তার ট্রাকটিও পদ্মায় তলিয়ে গেছে।
সাইদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ বেশ কয়েকটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু আমার ট্রাকটি কোথায় আছে তা-ও জানতে পারিনি। ট্রাকের আয় দিয়েই সংসার আর ব্যাংক লোন দিতাম। এখন কী করব, কোথায় যাব! আমার যে সব শেষ হয়ে গেল।

 

Comments (0)
Add Comment