নারায়ণগঞ্জে গলিত লোহায় দগ্ধ আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু

মিজানুরের লাশ চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ায় দাফন : মামলা দায়ের
স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রড প্রস্তুতকারক কারখানায় গলিত লোহা শরীরে পড়ে নিহত মিজানুর রহমানের লাশ চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয় বলে পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে। এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রিমিয়ার স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং কারখানায় বৃহস্পতিবার রাতে লোহা গলানোর পাত্র বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার শ্রমিকের মৃত্যু হলো। দগ্ধ আরও দুই শ্রমিককে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ চুয়াডাঙ্গা আদালতেও মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত শাকিল (২০) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ী এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে এবং আবু সিদ্দিক (৩০) কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী এলাকার টিপু শেখের ছেলে। গলিত লোহার আগুনে তাদের দুজনের শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছিলো। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় মিজানুর রহমান (৪২) ও ফাহিম (২৫) নামের দুই শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ীর বাউরা এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে রফিক মিয়া (৪৫) এবং রহমতপুর এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. রাজু (৪০) দগ্ধ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে রাজুর শরীরের শতভাগ ও রফিকের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বরপা এলাকার প্রিমিয়ার স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করার সময় লোহা গলানোর পাত্র (ভাট্টি) বিস্ফোরিত হয়ে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হন। দগ্ধ শ্রমিকেরা কারখানাটির ফার্নিশ বিভাগের অপারেটর ছিলেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া বাজারপাড়ার শাহজাহান মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান দীঘ ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রিমিয়ার স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে গলিত লোহা শরীরে পড়ে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ী এলাকার আকবর হোসেনের ছেলে ফাহিম হোসেনও (২৫) মারা যান। দগ্ধ হন পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ী এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে শাকিল (২০), একই উপজেলার বাউরা এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে রফিক মিয়া (৪৫), রহমতপুর এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রাজু (৪০), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার টিপু শেখের ছেলে আবু সিদ্দিক (৩০)। তারা সবাই ওই কারখানার ফার্নিশ বিভাগের অপারেটর ছিলেন। শুক্রবার সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে পরিবারের স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিজানুর রহমান লাশ নিয়ে বাড়িতে পৌছায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত মিজানুর রহমানের ছেলে মোমিনুল ইসলাম বাদী রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলা করা হবে বলে পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে।

Comments (0)
Add Comment