পদ্মা সেতুর পিলারে বারবার ধাক্কা : এবার ফেরি কাকলীর আঘাত

চালকদের উদাসীনতা আর স্রোতের কারণেই দুর্ঘটনা : বিব্রত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়
স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মা সেতুর ১০নম্বর পিলারে ফের ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে কাকলী নামের একটি ফেরি পিলারটিতে ধাক্কা দেয়। তবে পিলারের কোনো ক্ষতি হয়নি। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, প্রচ- স্রোত ও বাতাসের কারণে ধাক্কা লেগেছে। আর ফেরি চালাক বলেছেন, কারিগরি সমস্যার কথা। এ ঘটনায় ফেরির দুই চালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ভারপ্রাপ্ত মাস্টার বাদল হোসেন ও সুকানী আব্দুর রশীদ। এ নিয়ে গত দুই মাসে সেতুর পিলারে ৬বার ফেরির ধাক্কার ঘটনা ঘটলো।
বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, শুনেছি ফেরিটি বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আসছিলো। সেতুর ১১-১২ পিলারের মধ্যদিয়ে আসার কথা থাকলেও নদীর প্রচ- স্রোত ও বাতাসের কারণে ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০ নম্বর পিলার ক্যাপে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির একপাশে ফাটল ধরে। তবে ফাটল দিয়ে পানি ঢুকতে পারেনি। নিরাপদে ফেরিটি ঘাটে পৌঁছুতে পেরেছে। ফেরির চালক বাদল হোসেন জানান, ‘ফেরির কারিগরি সমস্যা ছিলো। যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়নি।’
উল্লেখ্য, এর আগে ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ১০নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। এদিন পাঁচজন আহত এবং দুটি প্রাইভেট কার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে ২৩ জুলাই সকাল ১০টার দিকে সেতুর সাত নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খায় রো রো ফেরি শাহজালাল। এতে ২০ যাত্রী আহত হন। সব ফেরিই বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া যাওয়ার পথে এ ধাক্কার ঘটনা ঘটে। বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটায় বিব্রত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু এলাকা ও পরে মাঝিকান্দির ঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কোনো জায়গায় ধাক্কা লাগলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। যদিও এ ধরনের ধাক্কায় সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তারপরও বারবার আঘাতে মানুষের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছি। এ সময় নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, জাজিরা ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম, পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামান ও মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল তার সঙ্গে ছিলেন।
খরব পেয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন পদ্মা সেতুতে বারবার আঘাত লাগছে, কী কারণে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শর্ষের মধ্যে ভূত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
২৩ জুলাই রো রো ফেরি শাহজালালের ধাক্কার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। কমিটি দুর্ঘটনার জন্য দুই চালককে (মাস্টার ও সুকানি) দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। এর আগেই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেল খরচ কমাতে সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়ে পদ্মা সেতুতে আঘাত করে রো রো ফেরি শাহজালাল। স্রোতের অনুকূলে কম গতিতে চালাতে (২৫০ আরপিএম) গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরিটি। অথচ স্রোতের বিপরীতে কিছুটা উপরের দিকে চালিয়ে পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ফাঁক দিয়ে নদী পাড়ি দিলে এ ঘটনা এড়াতে পারতেন দুই চালক (মাস্টার ও সুকানি)। সেক্ষেত্রে পথটি দীর্ঘ হতো এবং গতিও বাড়াতে হতো। এতে তেল খরচ হতো বেশি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তেল বাচিয়ে তা বাইরে বিক্রি করে দেয়া।
এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে কৌশল নেন ফেরির দুই চালক ও অন্য স্টাফরা। সেতুতে আঘাত দেয়ার আগে স্টিয়ারিং কাজ করছিল না বলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে দাবি করেন তারা। যদিও তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে স্টিয়ারিং ভালো পাওয়া যায়।

Comments (0)
Add Comment