পশ্চিমবঙ্গে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে যাত্রী কমছে দর্শনা চেকপোস্টে

দর্শনা অফিস: টানা ২ বছর করোনা মহামারিতে নাকাল গোটা দুনিয়া। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ধকল না কাটতেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আক্রমন শুরু হয়েছে। ওমিক্রন রোধে গোটা দেশে সতর্কতালম্বন, স্বাস্থ্যবিধি ও নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব বিস্তার করেছে ব্যাপকভাবে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট এলাকায়। যে কারণে এ সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা কমেছে বহুগুনে। যাত্রী না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছে চেকপোস্টের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ওমিক্রন সবচেয়ে মারাত্মক ভাইরাস। এ ভ্যারিয়েন্ট ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করছে। ভয়াবহ অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণে স্বভাবতই করোনা আতঙ্ক এবং উদ্বেগ ভর করেছে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। তাই ওমিক্রন রোধে বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেছে নানামুখী সময়পোযোগী পদক্ষেপ। দর্শনা চেকপোস্ট এলাকায় দফায় দফায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পরিদর্শন করছেন। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, বিজিবি চেকপোস্ট ও মেডিকেল ক্যাম্পে কঠোর নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। এ সীমান্তে মেডিকেল, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসার যাত্রীরা যাতায়াতের সুযোগ থাকলে ভ্রমণ ভিসা ছিলো বন্ধ। ওমিক্রনের কারণে কবে নাগাদ ভ্রমণ ভিসা কার্যক্রম শুরু হবে তা অনিশ্চিয়তায় রয়ে গেলো। বিশ্ব মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে দর্শনা জয়নগর সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত বন্ধ করা হয়। গত বছরের ১৭ মে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশের বিপন্নযাত্রীদের দেশে ফেরার সুযোগ করে দেয় সরকার। গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতে আটকে পড়া ২০৮১ জন যাত্রী বাংলাদেশে ফেরে। এ দিকে গত বছরের ১৭ মে থেকে চিকিৎসা ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার কার্যক্রম শুরু করে সরকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাক্ষরিত পত্রে রোববার থেকে দর্শনা জয়নগর, বেনাপোল, আখাউরা, বুড়িমারি, হিলি ও সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন, বিজিবি ও কাস্টমস চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। এ রকম সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল সৃষ্টি হওয়ায় দীর্ঘ ১৮ মাস পর কিছুটা হলেও জমজমাট হয়ে ওঠে। যতই দিন গেছে, ততই বেড়েছে যাত্রী সংখ্যা। জয়নগর চেকপোস্ট এলাকা পুনরায় ফিরে পায় প্রাণ চাঞ্চল্যতা। দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই আব্দুল আলীম জানান, বর্তমানে সকল রুটের মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসাধারীরা এ পথে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছে। দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারতে ভ্রমণকারীদের বৈধ পাসপোর্ট ভিসার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআর ল্যাবের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রযোজ্য। তবে এ সার্টিফিকেট নিয়েও সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে। যা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভারত থেকে যারা দেশে ফিরছেন তাদেরও ভারতের যেকোনো অনুমোদিত পিসিআর ল্যাবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআর ল্যাবের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এছাড়াও ভারত ফেরত যাত্রীদের দর্শনা বন্দরে মেডিকেল বুথে হ্যান্ড থার্মাল স্কানারের মাধ্যমে শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে বন্দরে করোনার র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টও করা হয়ে থাকে। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত এ পথে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চলাচলের সুযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিনজেস ভিসার যাত্রীরা করোনা পিসিআর পরীক্ষার সনদপত্রে ঘাপলা করছে। কতিপয় দালালচক্রের সদস্যরা বিজনেস ভিসা যাত্রীদের পিসিআর সনদপত্র জাল করে বাণিজ্যের পায়তারায় মাঠে নেমেছে। ইমিগ্রেশন ইনচার্জ জানিয়েছেন, এরই মধ্যে দালালচক্রের সদস্যদের চেকপোস্ট এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। চেকপোস্ট এলাকায় কোনো দালালের আনাগোনা দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ দিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। যে কারণে এরই মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ রুটে ভারতে গেছে ২৭ হাজার ৫৮৬ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ২১ হাজার ৪২৯ জন। সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারতে যায় ১ হাজার ২৮০, বাংলাদেশে আসে ৭৩০ জন যাত্রী। অক্টোবর মাসে ভারতে গেছে ৫ হাজার ৩৩৭, বাংলাদেশে এসেছে ৩ হাজার ৩৬৯, নভেম্বরে গেছে ৭ হাজার ৯৫৮ ও দেশে এসেছে ৫ হাজার ৬০৯, ডিসেম্বরে দেশে এসেছে ৮ হাজার ৩০৮ ও ভারতে গেছে ৯ হাজার ৩৮১ জন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে যাওয়া যাত্রী সংখ্যা ৩ হাজার ৬৩০ ও বাংলাদেশে আসা যাত্রী সংখ্যা ছিলো ৩ হাজার ৪১৩ জন। ১৬ তারিখ থেকে ওমিক্রনের আতঙ্ক ও পিসিআই সনদপত্র দুর্নীতির কারণে যাত্রী সংখ্যা কমেছে বহুগুনে। যে কারণে অনেকটাই যাত্রীবিহীন অবস্থায় পরিণত হয়েছে জয়নগর চেকপোস্ট এলাকায়। অলস সময় কাটাতে হচ্ছে চেকপোস্ট এলাকার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জনমানব শূন্য চেকপোস্ট এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

Comments (0)
Add Comment