ফাইলেরিয়াসিসের উচ্চ ঝুঁকিতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ ১৯ জেলার মানুষ

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ ১৯ জেলা ফাইলেরিয়াসিস উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) এ গবেষণা চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, কিউলেক্স মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় পরজীবীঘটিত রোগ ফাইলেরিয়াসিস। আক্রান্ত অঙ্গের ফুলে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া এই রোগের প্রধান উপসর্গ। এ রোগ দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন মাত্রায় শারীরিক অক্ষমতার কারণ হতে পারে। ফাইলেরিয়াসিসে আক্রান্ত পুরুষ রোগীর অ-থলি ফুলে যেতে পারে, যা হাইড্রোসিল নামে পরিচিত। নারীদের ক্ষেত্রে পা, যৌনাঙ্গ ফুলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পুরুষ। অ-থলি ফুলে যাওয়া রোগ বেশি পাওয়া যায় দেশের ৩৪ জেলায়। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯টি জেলা। গত সোমবার এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। অ থলি ফুলে যাওয়া রোগী শনাক্ত করতে ২০২০ থেকে টানা দুই বছর এই সমীক্ষা করে আইসিডিডিআর,বি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি ৫৭ হাজার ৪৩০ জন নারী ও পুরুষের কেসস্টাডি করে। সমীক্ষায় ৩২ হাজার ৬০৮ জনের শরীরে ফাইলেরিয়াসিস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৫১৬ জনের অ থলি সমস্যা। বাকিরা পা ফুলে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। সমীক্ষায় দেখা যায়, অ থলি ফুলে যাওয়া রোগের উচ্চ ঝুঁকির জেলার মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া মেহেরপুর, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই রোগ প্রতিরোধে ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর শিশুদের ফাইলেরিয়ার একটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হতো। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এই রোগে আক্রান্তের হার প্রতি লাখে একজনে নামিয়ে আনা। এই কর্মসূচির ফলে এটি অর্জনও করেছে বাংলাদেশ। তবে এখনও কিছু জেলায় এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অ থলি ফুলে যাওয়া রোগীরা আমাদের সমাজেরই মানুষ। কিন্তু তাঁরা পরিবারেই নানাভাবে অবহেলিত। তাঁদের চিকিৎসায় প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিকেই হয়। কিন্তু এ ধরনের রোগীরা সবকিছু গোপন করতে চান। গত ৫০ বছরে এই রোগের চিকিৎসার মান অনেক বেড়েছে। তবে আমাদেরও সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তিনি জানান, অনেক রোগী লজ্জার কারণে কাউকে অসুখের কথাও বলেন না। এ ছাড়া অস্ত্রোপাচার ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে এ রোগের চিকিৎসাও করাতে পারেন না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে এবং আইসিডিডিআর,বির উদ্যোগে এখন পর্যন্ত অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন এক হাজার ৪১ রোগী।

Comments (0)
Add Comment