সোমবার থেকে সীমিত, ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর লকডাউন’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে এবং আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করছে সরকার। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ দিন ঘোষণা করা হবে। সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় লকডাউন বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এর আগে কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির দেশজুড়ে পুরোপুরি ‘শাটডাউনের’ সুপারিশের পর শুক্রবার সরকারি ঘোষণায় সোমবার থেকে কঠোর লকডাউনের কথা বলা হয়। এরপর শনিবার দিনভর অনেককেই ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। পদ্মা নদী পাড়ি দিতে শিমুলিয়া ঘাটে ছিল অগুণিত মানুষের ভিড়। অন্যান্য রুটেও গাদাগাদি করে বিভিন্ন পরিবহনে করে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন মানুষ। শুক্রবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, “সোমবার থেকে ৭ দিন এই কঠোর লকডাউন চলবে। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হবে।
এবারের লকডাউনের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, “মানুষ যাতে বিধিনিষেধ মানে, সেজন্য কাজ করবে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
তবে বাজেটের কাজে সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক শাখা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ কয়েকটি অফিস আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। লকডাউনের সময়ে জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যানবাহন এবং গণমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।
মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই সারাদেশে ধাপে ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে লকডাউনের বিধিনিষেধ চালু রাখা হয়েছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিথিল করা হয়েছে বেশ কিছু নিয়ম। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় জুনের শুরু থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে বাড়তে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। শনিবার ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনাক্ত হয়েছে আরও ৪ হাজার ৩৩৪ জন নতুন রোগী। গত কয়েকদিন থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধির এমন পরিসংখ্যানের মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দেশে একটানা ১৪ দিন ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ ঘোষণার সুপারিশ করে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের সুপারিশে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর মার্চের শেষ দিকে সরকার সাধারণ ছুটির আদলে লকডাউন জারি করে, যা মে মাস পর্যন্ত ছিল। এর মধ্যে সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় বিধি-নিষেধও শিথিলতা আসে।
২০২১ সালের শুরুতে সংক্রমণের নিম্নগতিতে বিধি-নিষেধ ছিল না বললেও চলে। এই সময় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া পরিকল্পনাও সরকার করেছিল। কিন্তু মার্চ মাসের শেষে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ পরিস্থিতি নাজুক করে তুললে এপ্রিলে সারাদেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা ছিল আগের বছরের তুলনায় শিথিল। পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতিতে সেই বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলেও করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভুত ডেল্টা ধরনের সংক্রমণে সীমান্ত জেলাগুলোতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় কমিটি শাটডাউনের সুপারিশ করলে সরকার ওই পরামর্শ সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

Comments (0)
Add Comment