৩৩ বছর পর পুনর্স্থাপিত জাকসু: নির্বাচনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও অফিস ও তহবিল নিয়ে দুর্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার:গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির ফলেই এই নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। তবে নির্বাচনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অফিস বা তহবিল নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাননি। এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশা সৃষ্টি করেছে।

নির্বাচনের পর অফিস বুঝে নেওয়া ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় গতি নেই

নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখনো অফিস বুঝে নেননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অফিস সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। জাকসুর তহবিল, বাজেট বরাদ্দ এবং দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকও হয়নি। এমনকি হল সংসদগুলোর অধিকাংশ অফিসও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, যেখানে নতুন প্রতিনিধিদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের পর জাকসুর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। তবুও প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জাকসু ফি আদায় করা হয়েছে, যা বর্তমানে তহবিলে জমা থাকার কথা। কিন্তু তহবিলের হিসাব ও ব্যবহার নিয়ে প্রশাসনের কোনো স্বচ্ছতা নেই।

হল সংসদগুলোর অবস্থা ও প্রশাসনের ভূমিকা

নতুন নির্মিত ছয়টি হলে সংসদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ না থাকায় অস্থায়ীভাবে কক্ষ তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়ায় ফাংশনাল অফিসের অভাব দেখা দিয়েছে। প্রভোস্টদের উদাসীনতা এবং প্রশাসনের গড়িমসির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ মাহাদী জানান, “আমরা এখনো অফিস বুঝে পাইনি এবং কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।” একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংসদের ভিপি জিএমএম রায়হান কবীরও। তিনি বলেন, “সংসদের অফিস পরিত্যক্ত ছিল, সংস্কার কাজ শুরু হয়নি।”

অন্যদিকে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবেদা সুলতানা জানান, “দীর্ঘ সময় জাকসু না থাকার কারণে কিছু হলে রুমের অভাব ছিল। এখন প্রয়োজনীয় রুম তৈরি ও সংস্কারের কাজ চলছে।”

শিক্ষার্থীদের দাবী: স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন

জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এক মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা অফিস পাইনি এবং তহবিলের হিসাবও অজানা। ৩৩ বছর ধরে শিক্ষার্থীরা যে ফি দিয়েছে, তার সঠিক হিসাব আমাদের জানতে হবে। যদি তহবিলে অর্থ না থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দিতে হবে।”

জাকসুর পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক তানভীর রহমান এবং ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, “আমাদের দায়িত্ব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি এবং তহবিল নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা নিজেদের অর্থায়নে কাজ করছি এবং বসার জায়গাও পাইনি।”

জাকসু হলো শিক্ষার্থীদের সংগঠন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৩৩ বছর পর পুনরায় নির্বাচিত হলেও অফিস, তহবিল ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার অভাবে সংগঠন কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।

শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসেবে জাকসুর স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় অফিস সরবরাহ, তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং দায়িত্ববণ্টন করে কার্যকর কার্যক্রম শুরু করা। না হলে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য দেওয়া ফি ও সময়ের অপচয় হতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ৩৩ বছর পর পুনর্স্থাপিত জাকসু এখনো তার পূর্ণ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। প্রশাসনের গড়িমসি এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তার অভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অফিস বুঝে নিতে এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সংগঠন হিসেবে জাকসুর কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।

সূত্র: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক সূত্র, নির্বাচিত জাকসু প্রতিনিধিদের বিবৃতি