জীবননগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা

আলুর নির্ধারিত দামের ধার ধারছে না কেউ

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের নির্ধারিত দামকে ক্রেতাসাধারণ সাধুবাদ জানালেও বর্ধিত দাম রাখছেন না বিক্রেতা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা। আর বিক্রেতা বলছেন, আগের বেশি দামে আলু কেনায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। তবে বর্ধিত দামের আলু বাজারে এলে দাম কমে আসবে বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবারও আগের মতো চড়া দামেই আলু বিক্রি হয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়ে জানায়, হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৩, পাইকারিতে ২৫ ও খুচরায় ৩০ টাকা দরে বিক্রি হবে। এ দরে বিক্রি না হলে তা কঠোরভাবে মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করতে হবে। চিঠিতে আলু কেনা ও রাখা বাবদ এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ২১ টাকা খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, গতকাল ঢাকায় প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি। আলুর এত দাম কখনো ছিলো না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভোক্তা পর্যায়ে বেশি দামে আলু বিক্রি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জীবননগরে দু’আলু বিক্রেতাকে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মুনিম লিংকন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মুনিম লিংকন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জীবননগর পৌর শহরের কাঁচা বাজার পরিদর্শনে যান। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা ভোক্তা পর্যায়ে সরকারিভাবে বেধে দেয়া প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশি দামে আলু বিক্রি করার অপরাধে তিনি কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. মনির হোসেনকে ১ হাজার টাকা এবং মো. আলিম হোসেনকে ৩শ’ টাকা জরিমানা করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিম লিংকন আরো জানান, প্রতিদিন উপজেলার কাঁচা বাজারগুলো পরিদর্শন করা হবে। কোনো খুচরা বিক্রেতা যদি প্রতি কেজি আলুর মূল্য ৩০ টাকার বেশি এবং আড়ত পর্যায়ে পাইকারী ২৫ টাকার বেশি দামে আলু বিক্রি করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুধবার কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে আলুর দাম বেধে দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে দিনজুড়েই সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে আলু। কম দামে আলু পাওয়ার আশায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অনেক ক্রেতাই বাজারে ছুটে যান। তবে বাজারে গিয়ে তাদের হতাশ হতে হয়েছে। কারণ আগের মতোই আলুর জন্য চড়া দাম গুনতে হয়েছে।

জীবননগর পৌর শহরের কাঁচা বাজারে আলু কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম হতাশার সুরে বলেন, গতকাল গণমাধ্যমে দেখলাম সরকার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেধে দিয়েছেন। কম দামে আলু কিনতে পারবো- এই আশায় বাজারে এসেছি। কিন্তু সবাই আগের মতো প্রতি কেজি আলুর দাম ৪৫ টাকা চায়। বাজারে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তো কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না। আলুর দাম নিয়ে একই হতাশা ব্যক্ত করেন বাজার করতে আসা লিয়াকত হোসেন। তিনি বলেন, শুধু দাম বেধে দিলে হবে না, সংশ্লিষ্টদের দ্রুত মাঠে নামতে হবে। কঠোর মনিটরিং করতে হবে। তা না হলে কেউ সরকারের কথা শুনবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার আলুর খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা দরে। পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি।

উথলী বাজারের আলুর খুচরা বিক্রেতা রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়তে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। তবে কোনো আড়তেই ৪০ টাকার নিচে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আড়ত থেকে কম দামে আলু আনতে পারলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারবো। আড়ত থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে যে আলু রয়েছে, সেই আলু আগের কেনা। এখন নতুন করে তারা আলু কিনছে না।

আন্দুলবাড়িয়া বাজারের খুচরা আলু বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, গতকাল আড়ত থেকে যে দামে আলু কিনেছি, আজও একই দাম আলু কিনতে হয়েছে। সব খরচ মিলিয়ে আমাদের পক্ষে আলুর কেজি ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

Comments (0)
Add Comment