স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে আজকের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। ছোটবড় সব রাজনৈতিক দলই চায় সমাধান। বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের ‘সময়’ নিয়ে যে সংকট চলছে বৈঠকে তার সমাধান আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে যেসব কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে সেগুলোর ‘বৈধতা’ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে। অর্ধডজন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবকিছুর পরও ভোটের ‘সময়’ আটকে গেছে। আশা করি, আজকের বৈঠকটি মূলত ভোটের সময় কখন তা নির্ধারণ করা হবে। আমরা মনে করি ‘সময়’-টা আলোচনা করে নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। কারণ দেশে নির্বাচন হতে হবে। অন্যতম প্রধান দলের (বিএনপি) সঙ্গে সরকারের যদি ঝগড়াঝাঁটি হয় তাহলে ভোট হবে কীভাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হতে কোনো বাধা নেই। এখন সংস্কার নিয়ে টানাটানি চলছে। কবে নাগাদ ভোট হবে? এ সরকার ১০ মাস পার করেছে। আগামী এপ্রিলে ভোট দিতে চায়। অথচ বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি সাহাবুদ্দিন তিন মাসের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ভোট দিয়েছিলেন। সে নির্বাচন ছিলো সেরা নির্বাচন। এখন সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে নির্বাচন দেয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে সব সমস্যার সমাধান আসবে বলেই বিশ্বাস করি।’ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দেশের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভোটের কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। সে কারণে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হলে বিএনপির নেতারা আর কেউ আলাদা কথা বলার সুযোগ পাবেন না বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারা একটা বৈঠকে বসবেন। বৈঠককে কেন্দ্র করে সবার চোখ সেখানে। ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছেন, সেটা বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বেড়েছে। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কাজেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে আশা করি আজকের বৈঠকের পর একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে।’ সাইফুল হক বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আজকের বৈঠকে বিএনপি কেন ডিসেম্বরে ভোট চায় এবং সরকার কেন তিন মাস পিছিয়ে ভোট করতে চায় সে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আমার মনে হয় বৈঠকটি সরকারের পক্ষ থেকে হচ্ছে। আশা করি নির্বাচন এগিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিএনপি বাদে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, বল এখন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেবের কোর্টে। দেশে নির্বাচন তাকে দিতেই হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কোনো লাভ নেই। তাছাড়া বর্তমান সরকার যেসব কাজ করছে, তার কনটিনিউ রাজনৈতিক সরকারকেই করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘কথা পরিষ্কার, বল এখন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেবের কোর্টে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আমরা মনে করেছি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভালো নির্বাচন হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণ অভ্যুত্থানের সময়ে যে গণহত্যা হয়েছে সেটার বিচারও সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টা যে এপ্রিলের কথা বলেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। কারণ এত দেরি করলে নানা অপশক্তি সুযোগ নেবে। আর এপ্রিল নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত কোনো সময়ও না। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গেছেন, সফর নিয়ে নানা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে ভাবছি না। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আছেন। যদি দুজনের বৈঠক হয় আশা করব ইউনূস সাহেবের বোধোদয় হবে ডিসেম্বরেই ভোট দেয়ার। কাজেই ইউনূস সাহেবকেই সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।