সালাউদ্দীন কাজল:অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাশিপুর জমিদার বাড়ি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী ছোটগল্প মহেশ–এর পটভূমি এই বাড়ি। স্থাপত্য কাঠামোসহ মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এটি ইতিহাসের অমূল্য নিদর্শন হিসেবে টিকে থাকত। পর্যটন সম্ভাবনাময় এ বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারত একটি পর্যটন এলাকা।
জীবননগর উপজেলা শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে কাশিপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এটি বিশেষভাবে পরিচিত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবে। মামাবাড়িতে বেড়াতে এসে তিনি রচনা করেন তাঁর জনপ্রিয় ছোটগল্প মহেশ।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৬১ সালে জমিদার বিনয় কুমার মজুমদার এ বাড়ি নির্মাণ করেন। দেশ বিভাগের আগে এটি নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে বাড়িটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ।
কাশিপুর গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, জমিদার বিনয় কুমার ছিলেন অত্যাচারী। তিনি প্রজাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাতেন। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পের কাশিপুর জমিদার বাড়ি ধ্বংসের পথে। সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে এটি একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
বাড়িতে এখনও রয়েছে সেসময়ের গোলাঘর, কুয়া, খাট-পালঙ্ক, সোফা, ডাইনিং টেবিলসহ নানা আসবাবপত্র এবং মাটির নিচ থেকে পানি তোলার বিশেষ মোটর। প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পুরনো বটগাছ ও কৃষ্ণচূড়া। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে এ বাড়ি দেখতে আসেন।
স্থানীয় বজলুর রহমান বলেন, জমিদার বিনয় কুমারের ভাগ্নে ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মামাবাড়িতে বেড়াতে এসে প্রজাদের ওপর জমিদারের জুলুম দেখে তিনি মর্মাহত হন এবং তা থেকেই রচনা করেন ছোটগল্প মহেশ। গল্পে দরিদ্র কৃষক গফুর, তার গরু মহেশ ও মেয়ে আমেনার করুণ কাহিনি বর্ণনা করেছেন।
বর্তমানে হাবিল ও কাবিল নামে দুই ভাই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। তারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেও তারা এখানেই থাকছেন। শরৎচন্দ্রের স্মৃতি জড়িয়ে থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই বাড়ি দেখতে আসেন।
খুলনা থেকে বেড়াতে আসা কলেজছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহেশ গল্প পড়ে এই বাড়ির কথা জেনেছিলাম। আজ সরেজমিনে দেখে ভালো লাগছে। তবে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকায় এর সৌন্দর্য হারিয়েছে। সরকারিভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় শিক্ষক মো. শামিম বলেন, কাশিপুর জমিদার বাড়ি আমাদের উপজেলার ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে লেখা হয়েছিল কালজয়ী গল্প মহেশ। প্রশাসন যদি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তবে এটি সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিকশিত হতে পারে।