আদিয়ান মার্টসহ ১০ ই-কমার্সে লেনদেন বন্ধ করলো বিকাশ

ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি
স্টাফ রিপোর্টার: যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা না করায় ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করেছে বিকাশ। অপরদিকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিণ ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রাসেলকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেছেন আদালত।
গতকাল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিকাশ কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে যেসব ই-কমার্সের সাথে লেনদেন বন্ধ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা শপিং, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, নিডস, কিউকুম, আলাদিনের প্রদীপ, আদিয়ান মার্ট ও বুম বুম। এসব কোম্পানির সঙ্গে সেবা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২২ জুন এই ১০ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করে ব্র্যাক ব্যাংক।
জানা গেছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বিকাশের চুক্তি ছিল। কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছিল না বলে বিকাশের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। ২৩ জুন ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক এবং ২৪ জুন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকও গ্রাহকের স্বার্থের কথা বলে একইভাবে ওই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কার্ড ব্যবহার স্থগিত করে। অপরদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকমের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। গতকাল শনিবার দুদকের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির অনুসন্ধান চলাকালে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। সূত্র আরো জানায়, গত ৮ জুলাই গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না থাকার বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশত্যাগ করলে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় গত ৮ জুলাই ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় দুদক।
এদিকে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করাসহ নানা অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসা আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা ওই কম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে নেয়া ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, যা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।’
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এক-দুই মাসের আগাম সময় নিয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন ‘অফার’ দেয়া শুরু করেছিলো ইভ্যালি। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি, প্রাইভেট কারসহ নানা পণ্যের ক্রেতাদের ভিড় জমেছিল ইভ্যালিতে। স্বল্প মূল্যের এসব পণ্যের জন্য টাকা নেয়া হতো অগ্রিম, কিন্তু কিছু ক্রেতাকে পণ্য দিয়ে বাকিদের অপেক্ষায় রাখার কৌশল নিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে পরে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। লাপাত্তা হওয়ার আঁচ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে চলতি মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নীতিমালায় বলা হয়, অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোকে পণ্যের অর্ডার নেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে এবং ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম টাকা নেয়া যাবে না। এরপর থেকে ভাউচারের অফার দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এতেই গোমর ফাঁস হয় এসব ই কমার্সের।

Comments (0)
Add Comment