কেরুজ কমপ্লেক্সে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৫৩ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন

রাজস্ব খাতে ৬৫ কোটি ও ৩ বিভাগে ৭৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেও মুনাফা ১৪ কোটি টাকা
দর্শনা অফিস: দেশের সবগুলো চিনিকল যখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে গভীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখনো সরকারকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব দিয়েও মুনাফা অর্জন করেছে। কেরুজ কমপ্লেক্স বরাবরের মতো গত অর্থ বছরেও কেরুজ কমপ্লেক্সে মুনাফা অর্জন হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। সরকারের রাজস্ব খাতায় ৬৫ কোটি জমা দিয়েও মিলের ৩টি বিভাগের ৭৫ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে মূল মুনাফার খাতায় জমা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। কেরুজ কমপ্লেক্স আরও লাভজনক করতে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখি পদক্ষেপ। কেরুজ কমপ্লেক্সের বয়স পেরিয়েছে ৮২ বছর। জোড়াতালি দিয়েই ফি মাড়াই মরসুমের কার্যক্রম চালু করা হয়ে থাকে। খানেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোনোভাবে শেষ করা হয়ে থাকে আখ মাড়াই কার্যক্রম। লাগাতার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে নাজেহালে পড়তে হয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। চিনি কারখানার দশা যা হোক না কেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশন থেকে প্রতি বছরের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্র বেধে দিতে কম করেন না কর্তাবাবুরা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হোক বা না হোক বোঝা চাপিয়ে দিতে মোটেও ভুল হয় না করপোরেশনের। ২০১৮-১৯ রোপণ মরসুমে যেমন লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছে পৌছুতে পারেনি চিনিকল কর্তৃপক্ষ, তেমনি মাড়াইয়ের ক্ষেত্রেও দশা ছিলো একই। ৯০ মাড়াই দিবসে ৭ হাজার ৩৭৫ একর জমির আখ মাড়াই করে ৮০২৫ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকলে তা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই বছরে চিনি কারখানার নাম লোকসানের তালিকায় ঠাই পায়। যে কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কেরুজ চিনি কারখানায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চিনিকলের ৯টি খামার। খামারগুলো অব্যবস্থানা ও দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত হওয়ায় ফি বছরেই লোকসান গুনতে হয়। বরাবরের তুলনায় ব্যত্বয় ঘটেনি গত অর্থ বছরেও। অর্থাৎ ওই অর্থ বছরে ৯টি খামারে লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানা লাভের আশায় পথ চললেও দিনদিন অবশ্য লোকসানের অংকটা কমছে। গত অর্থ বছরে আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানায় লোকসান গুনতে হয়েছে মাত্র ২২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কেরুজ কমপ্লেক্স ৫টি বিভাগের মধ্যে চিনি, সার ও খামারে লোকসান গুনেছে ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ দিকে মুনাফা অর্জিত হয়েছে ডিস্টিলারী ও বায়োফার্টিলাইজার বিভাগ থেকে। ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার প্রুপলিটার দেশি ও বিদেশিী মদ উৎপাদন করে কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগ থেকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। বায়োফার্টিলাইজারে ভিনেগার উৎপাদনে মুনাফা অর্জিত হয়েছে ৩২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে ১ কোটি ২ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন হয়েছে। সর্বমোট মুনাফা অর্জন থেকে ওই অর্থ বছরে সরকারের রাজস্ব খাতে ভ্যাট ও শুল্ক খাতে জমা দিতে হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। অবশিষ্ট মুনাফার ৮৮ কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার টাকার মধ্যে চিনি, খামার ও সার কারখানার লোকসান পুষানো হয়েছে ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সরকারের খাতায় রাজস্ব দিয়ে, তিনটি বিভাগের লোকসান পুষিয়েও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কেরুজ কমপ্লেক্স মূল মুনাফা অর্জন করেছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কেরুজ কমপ্লেক্সের সবগুলো বিভাগের হিসাব মতে মুনাফা অর্জিত হয় ১৫৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের রাজস্ব খাতায় জমা দেয়া হয়েছে ৭৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। রাজস্ব দিয়েও ডিস্টিলারী কারখানা লাভ হয়েছিলো ৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। চিনি কারখানায় লোকসান গুনেছে ৬৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ৫০ লাখ ৬১ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বায়োফাটিলাইজারে। বাণিজ্যিক খামারগুলোতে লোকসান গুনেছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা লোকসান গুনেছে আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক খামারে। ফলে চিনিকলের ডিস্টিলারী কারখানা বাদে অন্যান্য ৪টি বিভাগে লোকসান গুনতে হয়েছে ৭৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। সরকারের রাজস্ব ও ৪টি বিভাগের লোকসান গুনার পরও কেরুজ কমপ্লেক্স ওই অর্থ বছরে লাভ হয়েছিলো ১১ কোটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সে হিসেব মতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের তুলনা ২০১৯-২০ অর্থ বছরের লাভের অংকটা বেশ মোটা। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ কমপ্লেক্স। সর্বক্ষেত্রে কেরুজ চিনিকলের রয়েছে অবদান। সরকারের এ মূল্যবান সম্পদ গর্বিত করেছে এ জেলা তথা দর্শনাকে। তাই এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম কাচামাল আখচাষ বাড়ানো খুবই জরুরী। কেরুজ কমপ্লেক্সে যে যেখানে যে যে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকে নিষ্টা, আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে চিনি কারখানা, এ অঞ্চল ফিরে পাবে সোনালী অতীত। তাই আসুন কেরুজ চিনিকলকে বাচাই নিজেদের স্বার্থে।

Comments (0)
Add Comment