কোটি টাকা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ কেরুজ ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে

দর্শনায় কেরুজ চিনিকলে চাকরি হারিয়ে দিশেহারা ৪২ শ্রমিকের সাংবাদিক সম্মেলন

দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকল। এ অঞ্চলে অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। দিনদিন ঐতিহ্যবাহী মিলটি হারাচ্ছে জৌলুস। ফি বছর চিনি কারখানায় প্রায় শত কোটি টাকা লোকসান গুনলেও পাল্লা দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন কোনো কোনো শ্রমিক নেতা। প্রতিনিয়ত চাকরি, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যে ঘটছে। এ বাণিজ্যের পেছনে লাখ লাখ টাকার খেলা অনেকটা টপ-সিক্রেট। যেন দেখার কেউ নেই, বোঝার কেউ নেই। চাকরি, পদোন্নতি বা বদলির জন্য জমি-জমা ও ভিটে বাড়ি বিক্রি করে অনেকেই সর্বশান্ত হলেও হয় না কোনো সুরাহ। তিমিরেই থেকে যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ। বারবার পার পেয়ে যায় অভিযুক্তরা। গত বছর দুয়েকের মধ্যে কেরুজ চিনিকলে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের খেলার ঘটনা ঘটেছে। শুরুতে ২৩২ জনকে নিয়োজনের নামে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। পরপরই চিনি কারখানা থেকে ৬০-৬২জন আনাড়ি শ্রমিককে প্রচুর টাকার বিনিময়ে ডিস্টিলারিতে বদলি করা হয়। পাশাপাশি শূন্যস্থলে নিয়োজনের ভিত্তিতে দৈনিক হাজিরায় নেয়া হয় অদক্ষ শ্রমিক। যে কারণে চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে চিনি কারখানাকেও। চলতি আখ মাড়াই মরসুম শুরুর দিন থেকেই ফুঁসতে থাকে বাদ পড়া শতাধিক দিন-হাজিরার শ্রমিক। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৫ সহ সর্বমোট ৭৭ জন দিন-হাজিরার শ্রমিককে আকস্মিকভাবে বসিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা লাগাতার আন্দোলন করলেও শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে তা জানা যায়নি। বাদ পড়া বাকি ৪২জন শ্রমিক করেছে সাংবাদিক সম্মেলন। এদের মধ্যে কেউ ৩০ বছর, আবার কেউ কেউ ২০-১৫ বছর ধরে এ কাজ করলেও কোনো কারণ ছাড়াই তাদের ছাটাই করে দেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরি হারানো এহসানুল হক রাজিব, মাহব্বুব ইসলাম, রেজাউল করিম রেজা, শামসুল হক, আব্দুল আলীম রাজু, তাজুল ইসলাম, আ. মান্নান মিন্টু, ফরহাদ হোসেন, হারুন অর রশিদ পান্না, রেজাউল করিম, শাহজামাল, শিপন, বায়েজিদ হোসেন সবুজ, মামুন, জহিরুল ইসলাম, সাইফুল, রাজিব, আরিফুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, আতাউর রহমান, নাসিম ইকবাল, হাসিবুর, রাজিবুল, মাসুদ পারভেজ, আ. আলীম, মুকুল, আফাজ, জহুরুল, শাহবুদ্দিন, জাহাঙ্গীর, আতিয়ার, হারুন, আশফাকুর, শহিদুল, গনেষ চন্দ্র দাস, শ্যামল চন্দ্র দাস, মহিদুল, আ. রশিদ. মতিয়ার রহমান, সাইদুর, সবুজ বিশ্বাস ও সজিব হাসান ৩০ থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে কেন আউট স্টেশন গার্ডে নিয়োজনকৃত। এদের মধ্যে অনেকেরই অভিযোগ চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এহসানুল হক রাজিব, রেজাউল ইসলাম ও হারুন অর রশিদ পান্না বলেন, আমাদের স্থলে যাদের নেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। ওতো পরিমাণ টাকা আমরা দিতে না পারায় সভাপতি তৈয়ব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান পথে বসিয়ে দিলো আমাদের। আমাদের চাকরি ফেরত না পেলে বড় ধরনের অন্দোলনে মাঠে নামবো। আগামী শনি বা রোববার মানববন্ধনের মধ্যদিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এরপরই যদি ন্যায্য দাবি পূরণ না হয় সেক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেও পিছুপা হবো না আমরা। তাদের আইনে আওতায় এনে বিচারের দাবি করা হবে। এ নিয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে গেলে তিনি জানিয়েছেন এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। তাছাড়া জাতির গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার ক্ষেত্রে এ ধরনের কর্মকা-ও ছিলো বিমাতা সুলভ। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু, সাধারণ সম্পাদক হারুন রাজু, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান রণি, দফতর সম্পাদক সাব্বির আলীম, সাংবাদিক এফএ আলমগীর, আহসান হাবীব মামুনসহ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তারা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চেষ্টা করা হচ্ছে সবাইকে নেয়ার। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ এ ৪২ জনকেও পূর্বের স্থলে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গার ২জন এমপিসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের স্বাক্ষর সংবলিত কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে যা শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। হয়তো আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

Comments (0)
Add Comment