খেতে বসা মাকে কুপিয়ে হত্যা : বিকারগ্রস্ত ছেলে আটক

স্টাফ রিপোর্টার/সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি: খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত তরকারি না থাকায় উত্তেজিত হয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কুলাঙ্গার মুকুল হোসেন। ধারালো দা দিয়ে বৃদ্ধা জবেদা খাতুনের মাথায় উপর্যুপুরি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের পিরোজখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, মাকে হত্যার পর নিজের ঘরে গিয়ে বসে ছিলেন ঘাতক মুকুল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুকুলকে আটক করে। বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয় হাসপাতাল মর্গে। নিহত জবেদা খাতুন (৫২) পিরোজখালী গ্রামের আসান আলীর স্ত্রী। অপরদিকে, ঘাতক মুকুল হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কয়েকজন। তবে পুলিশ বলেছে, তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা স্পষ্টভাবে জানা যাবে; অভিযুক্ত মুকুল মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা সেটা দেখবেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাড়ির কাজকর্ম সেরে শনিবার বিকেলে ঘরের পিড়িতে বসে ভাত খাচ্ছিলেন জবেদা খাতুন। তার সাথেই খেতে বসেন ছেলে মুকুল হোসেন। সে সময় মায়ের কাছে আরও তরকারি চান মুকুল। ঘরে তরকারি না থাকায় বেকার ছেলে মুকুলকে উপার্জন করার জন্য বলেন জবেদা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় বাগবিত-া। মাকে অকথ্য গালাগালি করেন মুকুল। একপর্যায়ে ঘরে থাকা গাছ কাটা দা দিয়ে জবেদার মাথায় উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জবেদা খাতুনের। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি গিয়ে দাদির রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে চিৎকার দেয় মুকুলের ৯ বছর বয়সী ছেলে রুহুল আমিন। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন ঘরের বারান্দায় মায়ের মৃতদেহ আর পাশের ঘরে চেয়ারে বসে রয়েছে ছেলে মুকুল। তার হাতেও রক্ত লেগে রয়েছে। পরে খবর দেয়া হয় পুলিশে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছায়। সেখান থেকে বৃদ্ধা জবেদা খাতুনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সে সময় ঘাতক ছেলে মুকুল হোসেনকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বছর দশেক আগে পার্শ্ববর্তী সুবদিয়া গ্রামে বিয়ে করেন মুকুল হোসেন। তাদের সংসারে জন্ম নেয় ছেলে রুহুল আমিন। মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ৫ বছর আগে শিশুসন্তানকে রেখে মুকুলকে তালাক দিয়ে চলে যান স্ত্রী। এক বছর পর অর্থাৎ গত চারবছর আগে গাড়াবাড়িয়া গ্রামে আবারও বিয়ে করেন মুকুল। কিন্তু মুকুলের আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় টেকেনি সে বিয়েও। বছর না ঘুরতেই বিচ্ছেদ ঘটিয়ে চলে যায় দ্বিতীয় স্ত্রীও। তারপর থেকে ছেলে রুহুল আমিন তার দাদির কাছে থেকেই বড় হতে থাকে। তারপর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে মুকুল। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে গ-গোল করতো। এমনকি বাবা-মাকে মারধরও করতো।
জবেদা খাতুনের বড়ভাই আলাউদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে আমার বোনের নিকট জমিজমা লিখে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে মুকুল। রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। তখন আমার বোন (জবেদা খাতুন) আমার বাড়িতে চলে যায়। কিছুদিন থাকার পর জবেদা আবার নিজের বাড়িতে ফেরে। আলাউদ্দিন আরও বলেন, আমার বোন জবেদা খাতুনের একমাত্র ছেলে মুকুল হোসেন। এক ছেলে হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তাকে অনেক আদরে বড় করা হয়। পরিবার থেকে তেমন শাসন না করার কারণে একপর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে মুকুল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, মুকুল মানসিক ভারসাম্যহীন। চিকিৎসাও করানো হয়েছে বলে জেনেছি। তিনি বলেন, শনিবার বিকেলে খাবার খাওয়ার সময় মায়ের সাথে মুকুলের গ-গোল হয়। খেতে খেতেই উত্তেজিত হয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে মুকুল হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের ছেলে মুকুল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহত জবেদা খাতুনের ভাই আলাউদ্দীন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মুকুল হোসেন মাদকাসক্ত ছিলেন, এখন কিছুটা বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, তদন্ত করে পরবর্তীতে হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

Comments (0)
Add Comment