গাংনীতে মাদকব্যবসায়ীকে না পেয়ে বয়োবৃদ্ধ দাদাকে আটক : টাকা না দেয়ায় আসামি করার অভিযোগ

গাংনী প্রতিনিধি: দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে মাদকব্যবসায়ীর পরিবর্তে বয়োবৃদ্ধ দাদাকে আটক করেছে মেহেরপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি অভিযান দল। ৩৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের মামলার আসামি হিসেবে মিল শ্রমিক বয়োবৃদ্ধ আব্দুল খালেককে (৭০) গাংনী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পরিবারের উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি হাজতবাসে থাকায় চোখের পানি ছাড়া আর কোনো অবলম্বন নেই আব্দুল খালেকের স্ত্রী পঙ্গুপ্রায় তহমিনা খাতুনের। মাদক মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার আব্দুল খালেককে আদালতে সোপর্দ করেছে গাংনী থানা।
তহমিনা খাতুনের অভিযোগ, তার নাতি মাহফুজকে খুঁজতে গিয়ে বুধবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দল তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে মাহফুজের দাদা আব্দুল খালেককে আটক করেন তারা। যাওয়ার সময় অভিযান দলের ইকরামুল নামের এক ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আব্দুল খালেককে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন। দিনমজুর খালেকের পরিবারের পক্ষে টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাকে মামলাসহ গাংনী থানায় সোপর্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযান দল। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজ চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। তবে তার সাথে তার দাদার সম্পর্ক নেই। দাদা দিনমজুর আব্দুল খালেক স্থানীয় একটি মিলে কাজ করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। মাহফুজের দোষ দাদার উপর দেয়ার বিষয়ে এলাকায় বিরাজ করছে ক্ষোভ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মেহেরপুরের পরিদর্শক শাহ জালালের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে পৌনে ১টার দিকে গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে অভিযান চালানো হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও গাংনী থানা পুলিশের একটি দলের সমন্বয়ে। মাহফুজ পলাতক থাকায় তার দাদা আব্দুল খালেককে গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো মতে ৩৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। মামলায় আব্দুল খালেকের নাতি মাহফজুকে ১নং আসামি ও খালেককে ২নং আসামি করেন শাহ জালাল।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে বয়োবৃদ্ধ দিনমজুর আব্দুল খালেকের স্ত্রী বলেন, অভিযানের লোকজন কি পেয়েছে তা কাউকে দেখাইনি। এ বিষয়ে তো আমার স্বামী জড়িত না। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও শুধুমাত্র অভাবের তাড়নায় তিনি বাড়ির পাশে একটি মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। আমি প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। শুধুমাত্র টাকা দিতে পারিনি বিধায় আমার স্বামীকে চালান দেয়া হয়েছে।
অভিযানকালীন সময়ে ওই দলটি শাদা কাগজে কয়েকজনের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তার মধ্যে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ আলীর ছেলে তোহিদুল ইসলাম ও পলাতক মাহফুজের স্ত্রী রয়েছেন।
তোহিদুল ইসলাম ও মাহফুজের স্ত্রী রুম্পা খাতুন বলেন, ফেনসিডিল উদ্ধার যেখান থেকে হয়েছে সেটি আমাদেরকে দেখানো হয়নি। পরে বলা হয় বস্তায় ফেনসিডিল আছে স্বাক্ষর করেন। শাদা কাগজের কয়েকটি পৃষ্টায় স্বাক্ষর করিয়ে তারা চলে যান।
রুম্পা খাতুন অভিযোগ করেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে আব্দুল খালেককে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তাদের মধ্য থেকে একজন আমাদের জানিয়ে চলে যায়। আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে টাকা ধার চেয়েও না পেয়ে তাকে ছাড়াতে পারিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাদক মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক শাহ জালালের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন মেহেরপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শরীয়তুল্লাহ। তিনি বলেন, ঘটনাটির প্রয়োজনীয় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Comments (0)
Add Comment