চুয়াডাঙ্গায় আরও ৫০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আরও ৫০ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এ সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এ হিসেবে শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেরই ধারণা, পরীক্ষা বাড়ালে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়বে আরও অনেক। অবশ্য চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ কমিটির সভাপতি তথা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বেশি বেশি করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, কোন রোগী পরীক্ষার ফি বাবদ ১শ টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের তরফে তা প্রদান করা হবে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ১৮টি গ্রামে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউন করা হয়। গতকাল সোমবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় শুধু ১৮টি গ্রাম নয়, পুরো দামুড়হুদা উপজেলাকেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কড়া নজরদারি চলবে। কোন ব্যাক্তি অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হলে এবং তার মুখে মাস্ক না থাকলে মোট অংকের জরিমানাই শুধু নয়, আরও কঠোর শাস্তির আওতায় নেয়া হবে। স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে সর্বস্তরে সকলকে। চা দোকানে আড্ডা দেখামাত্রই শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে সোমবার ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৫০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। নতুন ৫০ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ১৪ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জন, দামুড়গহুদা উপজেলার ২৫ জন, জীবননগর উপজেলার ৭ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট অক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩শ ২৯ জন। সোমবার আরও ৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ১ হাজার ৮শ ৮৯ জন। বর্তমানে জেলায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৬৯ জন। এর মধ্যে নিজ নিজ বাড়িতে ৩৩৪ জন। হাসপাতালে ৩১ জন। রেফার্ড রয়েছেন ৪ জন। সোমবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন আরও ১২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর মধ্যে সদর উপজেলার ৯১ জনের মধ্যে হাসপাতালে ১১ জন, বাড়িতে ৭৯ জন, রেফার্ড করা হয়েছে ১ জনকে। আলমডাঙ্গা উপজেলার ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জন বাড়িতে, ৩ জন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে ১ জনকে। দামুড়হুদা উপজেরার সক্রিয় ১৮৭ জন রোগরি মধ্যে ১৬৯ জন নিজ নিজ বাড়িতে, ১৬ জন হাসপাতালে ২ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। জীবননগর উপজেরার সক্রিয় ৬৩ জন রোগীর মধ্যে ৬২ জন নিজ নিজ বাড়িতে, একজন হাসপাতালে। এছাড়া দামুড়হুদার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্দি কাশি জর ও শ^াস কষ্টে ভুগে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। পরীক্ষা না করায় জানা সম্ভব হচ্ছে না তারা করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা। রোববার কুড়–লগাছির মেয়ে পরীপুুর কুল্লার এক গৃহবধু মারা গেলে সন্দেহজাগে অনেকের মনে। অপরদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ ভাইরাস সংক্রমণ এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। এরাপরও অনেকেই উপসর্গে ভুগলেও পরীক্ষায় তেমন আগ্রহী হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গায় সোমবার নতুন শনাক্তকৃত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সদরের ১৪ জন। এর মধ্যে একজনের বাড়ি ঢাকা গাজীপুরে। বাকি ১৩ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার ৪ জন, রেলপাড়ার ১ জন, সিনেমাহলপাড়ার ১ জন, কবিখালীর ১ জন, গাড়াবাড়িয়ার ১ জন, তিতুদহের একজন, রাজাপুরের একজন। আলমডাঙ্গার ৪ জনের মধ্যে বটিয়াপাড়ার ১জন, ইউএনও অফিসের ১ জন, জামজামির একজন, খোরদের একজন। জীবননগর উপজেলার ৭ জনের মধ্যে একজনের বাড়ি পাশর্^বর্তী ঝিনাইদহ মহেশপুরের। বাকি ৬ জনের মধ্যে মাধবখালীর একজন, পোস্ট অফিসপাড়ার ১ জন, লক্ষ্মীপুরের ১ জন,বাঁশদিয়ার ১ জন, সিংনগরের একজন ও উথলীর ১ জন। দামুড়হুদা উপজেলার ২৫ জনের মধ্যে দামুড়হুদারই ৭ জন। এর মধ্যে পুরাতনবাজারপাড়ার ১ জন। দর্শনা শ্যামপুরের ২ জন, দর্শনার ১ জন, জুড়ানপুরের ১ জন, গোবিন্দহুদার ১ জন, হাতিভাঙ্গার ১ জন, কার্পাসডাঙ্গার ১ জন, পারকৃষ্ণপুর মদনার ১ জন, হরিরামপুরের ৬ জন, গোপালপুরের ১ জন, চারুলীয়ার একজন ও কুড়–লগাছির ২ জন।
দেশে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২০ হাজার ৬শ ২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৫০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫শ ৬৪ জন। দেশে মোট ৬১ লাখ, ৯৫ হাজার ৭শ ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ, ২৯ হাজার ৯শ ৭২ জন। সোমবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮শ ৩০ জন। মারা গেছেন ৫৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ১শ ৭২ জন। চুয়াডাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা ৭২। জেলায় সোমবার পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ১শ ৯৯ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১০ হাজার ৭শ ৬৯ জন।

Comments (0)
Add Comment