চুয়াডাঙ্গায় করোনায় একজন উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ৩

দেশে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেলেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৪৩ জন : বেড়েছে সুস্থ হওয়ার হার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও দুজন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মৃত্যু হয় আলমডাঙ্গার এক গৃহবধূর। তার মরদেহ ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলমডাঙ্গায় তার দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে খাড়াগোদা গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রদীপ সরকার নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে দুপুরে সরোজগঞ্জ শম্ভুনগরের বৃদ্ধা জহরুরা খাতুন বেলা আড়ইটার দিকে মারা যান। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
অপরদিকে, জেলায় করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া গেছে ৩ জনের। নতুন এ তিনজনের মধ্যে দুজন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের একজন দর্শনার। অবশ্য সারাদেশে করোনায় মৃত্যু পরশুদিনের তুলনায় গতকাল আবারও বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৩ জন মারা গেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। মেহেরপুরের পরিস্থিতিও অনেকটা স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। যদিও আসন্ন শীতে করোনা কতোটা ভয়াানক হবে তা নিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্তাদের অনেকেই শঙ্কিত রয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে আরও ১ হাজার ৭শ ২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছেন ৪৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৬ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ হাজার ৮০২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত মো. মাবুদের স্ত্রী শাহনাজ বেগম কেয়া (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, লিভার ও শ্বাসকষ্ট রোগে ভূগছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে ৫ দিন আগে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়। ভর্তি করা হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শাহনাজ বেগম কেয়ার মৃত্যু হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরের সাতভাই পুকুরপাড়ের খবির মুন্সির মেয়ে। শাহনাজ বেগম কেয়ার বড়ভাই ইলিয়াস মুন্সি জানিয়েছন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ থাকার পর ৫ দিন আগে তার ছোটবোন শাহনাজ বেগম কেয়ার চিকিৎসার জন্য ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিডনি, লিভার রোগসহ শ্বাসকষ্ট থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে শাহনাজ বেগম কেয়ার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার মরদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থবিধি মেনে দাফন করা হবে বলেও জানান ইলিয়াস মুন্সি।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের খাড়াগোদা বাজারপাড়ার শ্রী বিজয় সরকারের ছেলে শ্রী প্রদীপ সরকার (২২) গত প্রায় ১৪ দিন যাবত হঠাৎ ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাড়িতে ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। অবস্থা খারাপ দেখে পরিবারের লোকজন রাত ৯টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিছুক্ষণ পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, প্রদীপ গত ২ সপ্তাহ ধরে জ্বর, ঠান্ডা নিয়ে বাড়িতে ভুগছিলেন। পরে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। মোটা মানুষ হিসেবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে ভেবে পরিবারের লোকজন বিষয়টি গোপন রাখে। গতকাল বিষয়টি জানাজানি হলে তারা করোনা উপসর্গ গোপন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা। রাতে অবস্থা খারাপের দিকে গেলে হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তবে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রদীপের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ শম্ভুনগরের আফসার আলীর স্ত্রী জহুরা খাতুন বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হলুদ জোনে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এছাড়াও মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এদিন ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসে। এর মধ্যে ৩ জনের পজিটিভ হয়েছে। এ তিনজনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের গুলশানপাড়ার একজন ও আলুকদিয়ার একজন। অপরজন দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের। নতুন ৩ জনকে নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩শ ৭১ জন। মঙ্গলবার সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭ জন। এ দিয়ে মোট সুস্থ হলেন ১ হাজার ১শ ২ জন। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে তথা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ২০ জন, হোম আইসোলেশন তথা বাড়িতে ছিলেন ২শ ৭ জন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের হারও নেমেছে অনেকটা স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে।
এদিকে মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুরে আরো ২ জন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে জেলায় মোট করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগীর সংখ্যা ৪১ জন। নতুন আক্রান্ত ২ জনের সবাই মেহেরপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীক্ষা শেষে এদিন বিকেলে নতুন ২০ জনের ফলাফল মেহেরপুর পৌঁছে। যার মধ্যে ২ জনের দেহে করোনা পজেটিভ হয়। বাকিগুলোর ফলাফল করোনা নেগেটিভ হয়। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় ৩ হাজার ৮৪৪ জনের দেহের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৫৪৮ জনের দেহে করোনা পজেটিভ হয়। এর মধ্যে ৪৮৮ জন সুস্থ হয়েছেন। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬১ জন, গাংনী উপজেলায ১৭৮ জন এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৪৯ জন রয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। চিকিৎসাধীন বাকি ৪১ জনের মধ্যে সদরে ১৫ জন, গাংনীতে ২১ জন এবং মুজিবনগরে ৫ জন রয়েছেন। ট্রান্সফার্ড হয়েছেন ৪৪ জন। যার মধ্যে সদর উপজেলার ৩১ জন, গাংনী উপজেলার ১২ জন ও মুজিবনগর উপজেলার একজন রয়েছেন। মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৭ জন, গাংনী উপজেলার ৬ জন এবং মুজিবনগর উপজেলার ২ জন রয়েছেন।
এদিকে, সারাদেশে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১ হাজার ৭শ ২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছেন ৪৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৬ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ হাজার ৮০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৪ জন। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এটা ছিলো ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গত পরশু সোমবার ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিলো। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ও হার সামান্য কমেছে।
প্রসঙ্গত : গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানানো হয়। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে সরকার। এখন দেশে সংক্রমণের সপ্তম মাস চলছে। শুরুর দিকে সংক্রমণ ধীর থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। জুনে তা তীব্র আকার নেয়। জুলাইয়ের শুরু থেকে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমতে থাকে। এ সময় পরীক্ষাও কম হয়। অবশ্য গত আগস্ট মাস থেকে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যার পাশাপাশি পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হারও কমতে দেখা গেছে। তবে মৃত্যু সেভাবে কমছে না।

 

Comments (0)
Add Comment