চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ : নতুন শনাক্ত ৭৬ জন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বেলগাছির আমান উল্লাহসহ আরও কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসেনি। অপরদিকে শুক্রবার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৭৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন আরও ৭ জন। শুক্রবার ছুটির দিনে স্বাস্থ্য বিভাগ চুয়াডাঙ্গার করো নমুনা সংগ্রহ করেনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুন শনাক্ত ৭৬ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৩৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জন ও জীবননগর উপজেলার ২ জন। সদর উপজেলার ৩৫ জনের মধ্যে একজনের বাড়ি অবশ্য মেহেরপুরের বাড়াদী। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকি ৩৪ জনের মধ্যে ১২ জনের বিস্তারিত জানা গেছে। এদের মধ্যে হানুরবাড়াদির ২ জন, ফার্মপাড়ার ২ জন, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার ১ জন, হাসপাতালপাড়ার ১ জন, গুলশানপাড়ার ১ জন, বেলগাছির ৩ জন, গোরস্তানপাড়ার ১ জন ও নূরনগরের একজন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের বিস্তারি জানা গেছে। এদের মধ্যে ১ জন হারদীর, একজন পাইকপাড়ার ও একজন কালীদাসপুরের। জীবননগর উপজেলার ২ জনের মধ্যে একজন উপজেলা শহরের বাজারপাড়ার বাসিন্দা। দামুড়হুদা উপজেলার ৩৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের বিস্তারিত জানা গেছে। এদের মধ্যে শিবনগরের ২ জন, হরিরামপুরের ৫ জন, কুতুবপুরের ৪ জন, মুন্সিপুরের ১ জন। এদিকে গতকপরশু দামুড়হুদা চারুলিয়ার রহমত আলী ও জীবননগর সুবলপুরের মোস্তফা করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যৃবরণ করেন। এছাড়াও জীবননগর সিংনগরের আনন্ত হালদার করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনিও মারা গেছেন। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। গতকাল পর্যন্ত তাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসেনি।
শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় সক্রিয় রোগী ছিলেন ৫ শ ৮ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৪৪ জন। রেফার্ড রয়েছেন ৪ জন। বাড়িতে রয়েছেন ৪৬০ জন। সদর উপজেলার সক্রিয় রোগী ১৭১ জনের মধ্যে হাসপাতালে ১৯ জন, বাড়িতে ১৫১ জন। রেফার্ড রয়েছেন ১ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার সক্রিয় ৪৮ জন রোগীর মধ্যে ৪১ জন বাড়িতে, ৬ জন হাসপাতালে, একজন রেফার্ড। দামুড়হুদা উপজেলার সক্রিয় ২০২ জনের মধ্যে ১৮৪ জন নিজ নিজ বাড়িতে, হাসপাতালে ১৬ জন ও রেফার্ড রয়েছেন ২ জন। জীবননগর উপজেলায় সক্রিয় ৮৭ জন রোগীর মধ্যে ৮৪ জন নিজ নিজ বাড়িতে। হাসপাতালে ৩ জন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৬শ ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১১ হাজার ১শ ৮২ জনের। এর মধ্যে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ২ হাজার ৫শ ২৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯শ ৩৮ জন। অপরদিকে দেশে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২০ হাজার ৮ শ ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে। ৩ হাজার ৮শ ৮৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯শ ৭০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯শ ৫৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৭ লাখ ৭৮ হাজার, ৪শ ২১ জন। মারা গেছেন আরও ৫৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ১৩ হাজার ৩শ ৯৯ জন। অপরদিকে বিশে^ মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারত সীমান্তবর্তি দামুড়হুদা উপজেলা বিশেষ লকডাউন করা হয়েছে। ১৪ দিনের লকডানের গতকাল ছিলো ৪র্থ দিন। জীবননগর উপজেলাতেও বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পরপরই দোকান পার্ট বন্ধসহ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পুনঃপুনঃ তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এরপরও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শতভাগ মাস্কপরা হচ্ছে না। দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেয়ায় চুয়াডাঙ্গায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ভয়াবহ ছোয়াছে ভাইরাস শুধু শহর ও শহরতলীতেই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সংক্রমিত হচ্ছেন মানুষ। অনেকে সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হয়েও নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে না। অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যখন শ^াসকষ্ট তীব্রতর হচ্ছে তখন তাদের নিকটজনেরা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিচ্ছেন। এধরনের রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বেশি। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছির আমানউল্লাহসহ কয়েকদিন বেশ ক’জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা নিয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ফলে সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ কমিটির সভাপতি তথা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আবারও বলেছেন, ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং সংক্রমণ রোধে সকলে দায়িত্বশীল হওয়া এখন খুবই জরুরী।

Comments (0)
Add Comment