চুয়াডাঙ্গায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের স্থান যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত পর্যায়ে

বাঁওড়ঘেঁষা বালুমাটির তপ্তমাঠে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প : অধিগ্রহণ নয় উপযুক্ত মূল্যেই কেনা হবে জমি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে গ্রিন পাউয়ার এনার্জি প্রকল্প বাস্তবায়নের স্থান যাচাই বাছাইয়ের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। জীবননগরের রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মৌজার বালিমাটির মাঠ ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শক দল সরেজমিন পরিদর্শনের কাজ সম্পন্ন করেছে। সোলারের মাধ্যমে তথা পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন হলে এলাকায় শুধু কর্মসংস্থানেরই ব্যবস্থা হবে না, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিরও প্রতিফলন ঘটবে। যে জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সেই জমি অধিগ্রহণ নয়, জমির মালিকদের নিকট থেকে উপযুক্ত মূল্যেই কিনবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

গ্রিন পাওয়ার এনার্জি প্লান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে কয়েক দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। সাইক্লিট এনার্জি সিঙ্গাপুর পিটিই দরপত্রে অংশ নেয়। ১শ ৭৯ একর জমিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। জার্মানি প্রযুক্তিতে পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রটি স্থাপনের লক্ষে কয়েক দফা জমি জরিপসহ প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মৌজার বালিমাটির মাঠটি রয়েছে যাচাই-বাছাই পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই জয়দিয়া বাওড়ের কোলঘেঘা বালিমাটির বিশাল মাঠের জমি বাড়তি মূল্যে ক্রয়সহ জমি বিক্রেতা পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেয়ার প্রসঙ্গও উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও কিছু ব্যক্তি ওই জমি অধিগ্রহণ হবে বলে খবর ছড়িয়ে গ্রামের পরিবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে। তারা আন্দোলনমুখিও হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়দের কয়েকজন। অপরদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কোম্পানিসূত্রে জানা গেছে, এক খ- জমিও অধিগ্রহণের মাধ্যমে নেয়া হবে না। প্রয়োজনীয় জমির মালিকদের নিকট থেকেই কেনা হবে। যে মালিক বিক্রি করতে আগ্রহী হবেন না তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে আগ্রহী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এখানে জোর জবরদস্তির কোনো কারণ নেই। যা কিছু হবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই। জমি নেয়ার পর বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে ২১ মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। এখানে ১৩০ জনের স্থায়ী চাকরিসহ কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের পাশেই স্থাপন করা হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে প্রতিবছর ৫শ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষা নেয়ার সুযোগ হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে যারা ভালো করবে তাদের সিঙ্গাপুরে চাকরির নিশ্চয়তাও দেয়া হবে। গ্রিন পাওয়ার এনার্জি প্লান্ট ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠা মানেই নিভৃত পল্লী শহরে রূপ নেবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১০ শতাংশ পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টিও বাস্তবায়ন হবে। অথচ কিছু ব্যক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। যে মাঠের কিছু জমি পতিত, কিছু জমিতে বাদাম, আলু মেস্তা ছাড়া উল্লেখযোগ্য আবাদ হয় না, সেই জমিকে তিন ফসলি জমি দাবি করেও অনেকে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার তরফে এ অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, সম্প্রতি একজন উপ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপদস্থ পরিদর্শনদল পরিদর্শন করেন। এ দলে কৃষি কর্মকর্তা, বিদ্যুত বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাসহ অনেকেই ছিলেন। তারা সরেজমিন পরিদর্শনকালে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ জমির মালিকদের অনেকের সাথেই সরাসরি যেমন কথা বলেছেন, তেমনই মাঠের মাটিও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করেছে। ১০৯ বিঘা জমির মালিক ইতোমধ্যেই জমি বিক্রির সম্মতি দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কিছু ব্যক্তি তিন ফসলি জমির মাঠ বলে দাবি করায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছেন, যে জমিতে প্রকল্প স্থাপন করা হবে সেই মাঠ এখন ফসলে ভরা। অথচ ইতোপূর্বে কৃষি অফিসার স্মারক নম্বর ছাড়াই প্রত্যায়ন দিয়েছেন। এ নিয়েও ক্ষোভদানা বেঁধেছে। যদিও প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষের লোকজন বলেছেন, দেড় দুই বছর ধরে ওই প্রকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে। এরপর থেকেই মাঠে ফসল হোক আর না হোক আবাদ বেড়েছে। ফলন কতটুকু হচ্ছে তা কি দেখার বিষয় নয়?

সত্যিই কি তিন ফসলি জমি? এ প্রসঙ্গে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ শাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে মাঠকে বালিমাটির মাঠ বলা হচ্ছে সেটা তো লুকিয়ে রাখার বস্তু নয়। প্রকাশ্যেই রয়েছে। যে কেউ সরেজমিনে দেখলেই তার যথার্থ প্রমাণ পাবেন। বালিমাটিতে কি তিন ফসল হয়? বাদাম, মেস্তাসহ কিছু আবাদ হলেও তাতে ফলন বিপর্যয়ের বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে অজানা নয়। তাছাড়া কয়েক বছর আগে আমি মাঠের ৩৭৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। মাটি শুধু বেলে নয়, কিছুস্থানে একেবারেই বালু। এ কারণে পুরো মাঠই তেতে থাকে। উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি তপ্তমাটির কারণে। রায়পুর ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। এখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে উন্নত প্রযুুক্তিতে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এটা বাস্তবায়ন হলে রায়পুর ইউনয়নের যেমন রাজস্ব আয় হবে, তেমনই এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকেই মাঠটি সম্পর্কে স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করলেও কিছু ব্যক্তির দাবি, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ফসলি জমি বিনষ্ট হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। যে মাঠে ধানের আবাদ হয় না বলা হচ্ছে সেই মাঠের এক প্রান্তে প্রায় ৩০বিঘা জমিতে ধানের আবাদ রয়েছে। রয়েছে পেয়ারা বাগানও। এসব জমি অধিগ্রহণ করা হবে বলে প্রচার প্রচারণায় জমির মালিকদের মধ্যে অনেকেই পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে ভেবে আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ফুটে উঠছে অনিশ্চয়তা। ফলে প্রশাসনিক এবং এলাকার দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে যথাথথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে অনেকেই আভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, জমির প্রকৃত মালিকেরা জমি বিক্রি না করলে যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা ওই জমি ব্যবহার করতে পারবেন না, সেহেতু তৃতীয় পক্ষ কোনো সুযোগ নিচ্ছে কি না তা খুতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় ব্যাহত হবে উন্নয়ন।

Comments (0)
Add Comment