চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ ৩ জেলায় বিএডিসি’র ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ

বাধার কারণে কাজ করছেন না কোনো শ্রমিক : নেপথ্যে দুই শীর্ষ কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও  কুষ্টিয়া জেলায় বিএডিসি’র পুনর্নিধারিত দামের ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুদিন ধরে ডিলাররা ধান বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না। গত বুধবার সকালে থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে থেকে কোনো ডিলার ধান বীজ নিতে পারেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। বাধার কারণে কোনো শ্রমিক কাজ করছেন না। এতে ডিলারদের মাঝে ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ বিতরণ বর্ষে বিএডিসি’র কুষ্টিয়া বিপণন ও চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের প্রায় তিন হাজার টন বোরো ধান বীজ পুনর্নিধারিত দামে বিক্রয়ের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। ১১ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ে পাঠিয়ে শর্তসাপেক্ষে ধান বীজ বিক্রয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে ব্রি-২৮ ধানসহ সব চিকন জাতের ধান বীজের দাম প্রতি কেজি ৩৮ টাকা ও ব্রি-২৯ ধান বীজসহ মাঝারি চিকন জাত ৩৭ টাকা এবং সব মোটা জাতের ধান বীজ ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে বিধি মোতাবেক ডিলারদের মাঝে পুনরায় বরাদ্দ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যেসব ডিলার বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলন করেছেন তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিএডিসি’র একটি সূত্র জানায়, এমন নির্দেশনা না মেনে বিএডিসি’র দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পুনর্নিরর্ধারিত দামের এক হাজার একশ টন ধান বীজ সালাউদ্দিন নামে চুয়াডাঙ্গার এক ডিলারকে দেয়ার জন্য কুষ্টিয়া অফিসে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু কুষ্টিয়া বিপণন কার্যালয় থেকে বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলনকারী ডিলারদের মাধ্যে পুনর্নিরর্ধারিত দামের ধান বীজ বরাদ্দ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী ডিলার সালাউদ্দিনসহ বিএডিসি’র ওই দুই কর্মকর্তা। সর্বশেষ চাপের মুখে ডিলারদের বরাদ্দ করা ধান বীজ কর্তন করে ওই ডিলারকে ৬৬০ টন ধান বীজ দিতে বাধ্য হয় কুষ্টিয়া বিপণন কার্যালয়। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হননি বিএডিসি’র দুই কর্মকর্তা।

ডিলারদের অভিযোগ, বাকি ৪৪০ টন ধান বীজ না দেয়ায় ওই দুই কর্মকর্তার ইন্ধনে ডিলার সালাউদ্দিন ও স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে লেলিয়ে দেন। বুধবার সকালে বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে ডিলারদের একাধিক ট্রাক আটকে দেয় হয়। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় পুনর্নির্ধারিত দামের ধান বীজ উত্তোলন। ডিলাররা আরও জানান, চলতি বছর এই অঞ্চলে বিএডিসি’র গম বীজ চরম সংকট সৃষ্টির পেছনে বিএডিসি’র দুই কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। বরাদ্দ হওয়া বীজ ডিলারদের না দিয়ে প্রায় আড়াইশ টন গম বীজ সালাউদ্দিন ডিলারকে দিয়ে অধিক দামে কালোবাজারে বিক্রি করিয়েছেন। যে কারণে এই অঞ্চলে গম বীজের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

মেহেরপুর জেলার বীজ ডিলার আরমান আলী বলেন, আমি বিএডিসি’র সব বীজ সর্বোচ্চ পরিমাণ বিক্রি করি। অথচ বরাদ্দ দেয়ার সময় লাভজনক বীজ একজন অব্যবসায়ী ডিলারকে বেশি দেয়া হয়। এর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। সর্বশেষ বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজ উত্তোলনের আনুপাতিক হারে আমার নামে পুনর্নির্ধারিত দামের ধান বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দ করা ওই ধান বীজের পে-অর্ডার কুষ্টিয়া বিপণন দপ্তরে জমা দিয়ে মেমো কেটে চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে উত্তোলন করতে যাই। বুধবার সকালে আমার ট্রাকে ধান বীজ লোড করতে গেলে বিএডিসি’র কর্মকর্তারা জানান, কোনো ধান বীজ দেয়া যাবে না। বীজ দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দার পুনর্নির্ধারিত দামের ধান বীজ ডিলারদের দিতে নিষেধ করেছেন। এখানকার লেবাররাও তাদের নিয়ন্ত্রিত। নিষেধ করায় লেবারও কাজ করছেন না। এতে দুদিন ধরে পুনর্নির্ধারিত দামের ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

জানাতে চাইলে নঈম জোয়ার্দ্দার বলেন, আমি ধান বীজ উত্তোলনে বাধা দিইনি। আমি বলেছি, চুয়াডাঙ্গার ডিলাররা কম পেয়েছে। সবাই বসে সমাধান করে ধান উত্তোলন করেন।

কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসি বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েদ রিপন বলেন, কৃষি ভবনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের কারণে সারা দেশে ডিলারদের ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সারা দেশে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওই দুই কর্মকর্তার মনোনীত একজন করে ডিলার রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন দুই কর্মকর্তা।

কুষ্টিয়া বিএডিসি বীজ বিপণন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের কোনো চাপ নেই। যেসব ডিলার বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলন করেছেন তাদের মাঝেই পুনর্নির্ধারিত দরে ধান বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে ধান উত্তোলনে বাধা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে।

Comments (0)
Add Comment