দেশের চারদিক ঘিরে ফেলেছে করোনা

একদিনেই শনাক্ত ৫০৩, মৃত্যু ৪

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: মরণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবল এখন ৬০ জেলায়। এখন পর্যন্ত পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরায় এই রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা প্রথমবারের মতো পাঁচশ’ ছাড়িয়েছে। এ সময় মোট ৫০৩ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৬৮৯ জন। মারা গেছেন ৪ জন। সব মিলে মৃতের সংখ্যা ১৩১।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩ হাজার ৬৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চিহ্নিতের সংখ্যা (৫০৩) আগের দিনের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে এযাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক চিহ্নিত হল এদিন। এর আগে সবচেয়ে বেশি ছিল ৪৯২ জন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে ৮ মার্চ। আর ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে রাজধানী ঢাকার দেড়শ’ স্থানে চিহ্নিত হয়েছে করোনা রোগী। দেশের মোট রোগী অর্ধেকের বেশিই এ মেগাসিটিতে। ৮৬ শতাংশ রোগী ঢাকা বিভাগে চিহ্নিত হয়েছে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছেই।

বিশেষ করে ঢাকা শহর, ঢাকা জেলা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে শনাক্তের হার খুবই বেশি।

শুক্রবার দুপুরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় মোট শনাক্ত হলেন চার হাজার ৬৮৯ জন। শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বাড়লেও ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তাদের সবাই পুরুষ এবং বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। চারজনই ঢাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩১ জনের। একই সময় সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। এ নিয়ে এযাবৎ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১২ জন।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার হার শতকরা সাত দশমিক ৯ শতাংশের চেয়ে বেশি।

এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৬ জনের নমুনা। যাদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৮৯ জন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে আছেন ১২৩ জন, মোট আইসোলেশনে আছেন ৯৯৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৮ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেলেন মোট ৬২২ জন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন তিন হাজার ৬৯৬ জন। এ পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টিনে ছিলেন এক লাখ ৭১ হাজার ৮৪৬ জন।

এছাড়া কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৮৯ হাজার ১১২ জন। বর্তমানে হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮২ হাজার ৭৩৪ জন।

সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ৬০১টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যায় ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে।

কোন বিভাগে কত শতাংশ : স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মোট রোগীর ৫০ দশমিক ৫৯ শতাংশই ঢাকা শহরের। আর ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় আছে ৩৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩.৮৩ শতাংশ, সিলেটে ১.২ শতাংশ, রংপুরে ১.৭২ শতাংশ, খুলনায় দশমিক ৯৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩.৪১ শতাংশ, বরিশালে ২.১১ শতাংশ এবং রাজশাহীতে দশমিক ৭৯ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে।

সংযমের পাশাপাশি মানুন স্বাস্থ্যবিধিও : ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ইসলামী ফাউন্ডেশন পবিত্র রমজানের সময়ে এশা এবং তারাবিহ নামাজের বিষয়ে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেসব মেনে চলুন।

ইফতার নিয়ে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ করেন তিনি।

ডা. নাসিমা সুলতানা সতর্ক করে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। বৃহস্পতিবার শনাক্ত হওয়া ৪২৪ জনের পর শুক্রবার ৫০৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

কেবল জনসাধারণের সহযোগিতা পেলেই নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা কমতে পারে। নয়তো এ সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানেই অসুস্থ নন। তারা আসলে সুস্থ। যারা ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন, তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরও নিরাপদে রাখার জন্য এই কোয়ারেন্টিন।

 

Comments (0)
Add Comment